শারমিন রিমান্ডে, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার’

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শারমিন জাহানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর আদালত। আজ শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মঈনুল ইসলাম এ রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস এ আসামিকে আদালতে হাজির করে তিন দিনেরই রিমান্ড আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, শারমিন জাহান জেনে শুনে কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের মাস্ক সরবরাহে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রের কোটেশন অনুযায়ী ফেস মাক্স সরবরাহ করেননি। এর পেছনের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে এবং তাকে নিয়ে অভিযানের লক্ষ্যে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাষ্ট্র সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করে শুনানি করেন।

আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী পনির হোসেন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করে বলেন, ‘আসামি ঘটনার সাথে জড়িত না। তিনি ট্রেনিং এ চীনের উহানে ছিলেন। ট্রেনিং শেষ করে দেশের সেবা করতে এসেছেন। এর আগেও তিনি সেখানে ফেসমাস্ক সরবরাহ করেছেন। যে ঘটনার জন্য মামলা করা হলো সেই ফেস মাস্ক তিনি এক মাস আগে সরবরাহ করেছেন। তখন কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এক মাস পড়ে এসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো। বড় ধরনের কোনো অন্যায়কারীকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে শারমিন জাহানকে ফাঁসানো হয়েছে।’

শুনানির এক পর্যায়ে বিচারকের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শাখা-১ এর সহকারী রেজিস্ট্রার আসামি শারমিন জাহান বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেস মাস্ক সরবরাহ করি। চার লোডের মধ্যে দুইটা ভালো। আর যেগুলো খারাপ সেগুলো আমাকে ফেরত দিত কর্তৃপক্ষ। এক মাসে আগে দেওয়া মালের অভিযোগ তারা ১৮ তারিখে আমাকে জানিয়েছে, মাল ভালো না।’

‘আমি চীনের উহানে ট্রেনিং এ ছিলাম। ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে মানুষের সেবা করতে এ কাজ করছি’, বলেন তিনি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ড শুনানি শেষে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন জাহানকে যখন গাড়িতে উঠানো হয় তখন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আপনারা এর আসল সত্য উদঘাটন করুন।’

প্রসঙ্গত, নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের দায়ে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে গত ২৩ জুলাই মামলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এর বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০ জুন প্রথম দফায় ১ হাজার ৩০০, ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১ হাজার এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে।

কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়, ‘কোনো কোনো ফেস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ এর সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত।

এ বিষয়ে গত ১৮ জুলাই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএসএমএমইউ। ২০ জুলাই লিখিত জবাবে শারমিন দুঃখ প্রকাশ করেন।

Print Friendly

Related Posts