করোনার আজাব ও মুক্তির পথ

এএইচএম নোমান

 

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার এক আয়াত ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন, আখিরাতের কল্যাণও দিন, এবং দোযখের আগুন থেকে বাঁচান’, এই আয়াত দিয়ে আমরা পরাক্রমশালী আল্লাহর দরবারে মার্জনা পাওয়ার আশায় মুনাজাত করি।

দেখা যায় প্রতিদিনের প্রার্থনায় আমরা প্রথমে দুনিয়ার কল্যাণ, পরে আখেরাতের কল্যাণ কামনা করি এবং একই সঙ্গে দোযখের আগুন থেকে বাঁচার প্রার্থনা করি।

দুনিয়ার কাজকে যদি ফিফটি পার্সেন্ট ধরে আমরা সম্পূর্ণ ব্যস্ততায় লোভ লালসায় নিমগ্ন হয়ে মত্ত হয়ে থাকি। অপর পক্ষে আখেরাতের কাজে যদি ফিফটি পার্সেন্ট কথা ভাবি, কত পার্সেন্ট আমরা সেখানে ব্যয় করি? এই ফিফটি-ফিফটির হিসাব কষলেই পাশ ফেলের অংকটা পরিস্কার হয়ে যায়।

করোনা ভাইরাসের যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি চলছে, যা আমরা আতংকিত ও অনিশ্চিত অবস্থায় আছি। দুনিয়া ও আখেরাতের ভালো-মন্দ, ইহকাল পরকালের সকল সৃষ্টিই আল্লাহর পূর্ণ কর্তৃত্বে। পুরস্কার তথা জান্নাত, শাস্তি তথা জাহান্নাম, উভয়টাই শর্ত সাপেক্ষে অবধারিত। ধৈর্য ধারণ করে আখেরাতের কল্যাণ কামনা বিধি বিধান অনুশীলন করে পুরস্কারের অপেক্ষায়ই মিলবে জান্নাত। অনাচার ও সৃষ্টিকর্তার বিধি-বিধান না মানাই হল আযাব ও ধ্বংসের জাহান্নাম।

সূরা আরাফ এ আছে, ‘আমি (আল্লাহ্) পরিবর্তন করেছি, খারাপ অবস্থাটাকে ভাল অবস্থা দ্বারা’। করোনা ভাইরাসের এই আযাব ও গযব এর মাধ্যমে পরিবর্তনের কথা নিশ্চয় আমাদের অন্তরে আসে।

পরিবর্তন: কানাডার টরেন্টোতে এতকাল পর্যন্ত মসজিদের ভিতরে আজান হত। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে (হয়ত) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই রমজান থেকে ড্যানফোর্থ এলাকার মদিনা মসজিদ সহ অনেক বড় মসজিদের ছাদ থেকে মাইকে আজান দেয়ার অনুমতি দেন।

এই ভাইরাসে ভারতের দিল্লী শহরে তাবলীগ জামাত সদস্যদের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠে, সেই দিল্লীতেই পত্রিকান্তরে জানা যায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ ভারতীয়রা তাবলীগ জামাতের লোকদের রক্তের প্লাজমা দেওয়া-নেওয়া দেশব্যাপি প্রশংসা পেয়েছে-এখন তারা ভারতে সুপারহিরো নামে পরিচিত।

পৃথিবীখ্যাত একজন রেসলার (?) করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে মোকাবেলায় পবিত্র কোরআনকে বুঝতে গিয়ে তিনি নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমান দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী সামর্থবান, ধনবান আমেরিকা ও এর প্রেসিডেন্ট স্বৈরাচার অহংকারী বর্নবাদী মডোনাল্ট ট্টাম্প (নিজেও বিশাল ব্যবসায়ি ও ধনকূব) করোনা তান্ডবে পর্যদস্ত। এসব কি ঐতিহাসিক মন্দ থেকে ভালর পরিবর্তনের শুভ সংবাদ নয় কি?

করোনা দূর্যোগ সামাল দিতে লকডাউনকালে ১ কোটি অসহায় কর্মহারা গরীব ইত্যাদিদের তালিকা ও প্রতি পরিবারকে মোবাইল মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। দ্রুততার কারনে ক্রনিক দূর্নীতির কাঠামো কারনে স্বচ্ছতার প্রশ্ন ছিল প্রচুর। তারপরেও তালিকা করা ও দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এই সঙ্গে বর্ণিত ৮৫ আযাব গজব যার বা যে সকল সফর আলী, রমজান আলীদের জন্য হচ্ছে তাদেরও তালিকা করতে হবে। তাহলে আত্মশুদ্ধি সংশোধন তওবা ও বিধি বিধান অনুশীলন করলে আল্লাহ মাফ করবেন এটাই তাদের জন্য সচেতনতা- ত্রাণ অনুদান বা প্রনোদনা। এটাই মুক্তির পথ- ধর্ম ও কর্মের হারাহারি সংযোগ।

যে যে কারণে আযাব গযব আসে পবিত্র কোরআন গ্রন্থের ৩০ পারা পড়ে খুঁজে খুঁজে তালিকা করেছি। মোদ্দা ভাবে প্রাপ্ত ৮৫টি কারণ যেমন: ১.পাপাচার ২. অত্যাচারী ৩.সদকা/দান না করা, ৪. অকৃতজ্ঞ ৫. সম্পদে আসক্তি, ৬. অর্থ জমাকারী ৭. কৃপণতা, ৮. ইয়াতীম আত্মীয় ও অসহায় দরিদ্রকে খাবার না দেয়া ৯. অধৈর্য্য ১০. ধনসম্পদ ভক্ষণকারী ১১. স্বর্ণ ও রৌপ্য জমাকারী, ১২. আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় না করা ১৩. প্রিয় বস্তু হতে ব্যয় না করা ১৪. লোক দেখানো ধনসম্পদ ব্যয়কারী ১৫. শেষ দিবসের প্রতি অবিশ্বাসী ১৬. রাহাজানি, ১৭. লুটপাট ১৮. ওজনে কম দেয়া ১৯. গরীব ও দূর্বলদের উপর জুলুম করা ২০. লোভী ২১. ষড়যন্ত্রকারী, ২২. মুনাফিক ২৩. বিদাআত, ২৪. ফাসেক ২৫. বিলাসীতা, ২৬. অন্যায় বিচার, ২৭. সৎকাজের আদেশ, ২৮. অন্যায় কাজে বাধা প্রদান না করা, ২৯. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ৩০. যাবতীয় বদস্বভাব ৩১. পাপাচারিতা ৩২. মিথ্যারোপকারী ৩৩. অহংকারী ৩৪. অনর্থক কাজে বা আলোচনায় সময় অপচয়কারী ৩৫. ধোকা দেওয়া ৩৬. পথভ্রষ্ট ৩৭. ধারণার উপর চলে ৩৮. চক্রান্তকারী ৩৯. অপকর্মকারী ৪০. সমকক্ষ সৃষ্টিকারী ৪১. অশ্লীলকারী ৪২. বদমেজাজী ৪৩. অপচয়কারী ৪৪. কুটিল ৪৫. বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী ৪৬. লোকদের প্রাপ্যবস্তু কম দানকারী ৪৭. দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্টকারী ৪৮. ঘুষ গ্রহণকারী ৪৯. আমানত খেয়ানতকারী ৫০. বিশ্বাসঘাতক ৫১. যাকাত না দেয়া ৫২. মিথ্যাবাদী ৫৩. মুনাফিক ৫৪. সুযোগ সন্ধানী ৫৫. অসৎ ৫৬. অবাধ্য ৫৭. বিভ্রান্তকারী ৫৮. জুলুমকারী- (৯৯ টি দুম্বাওয়ালা একটি দুম্বাওয়ালারও মালিকানা চায়, এদেরকে বলে জুলুমকারী (সূরা সদ, রূকু-২) দাঊদ আ. মিমাংসাকারী) ৫৯. বিবাদ সৃষ্টীকারী ৬০. অপদস্থকারী ৬১. অশান্তি সৃষ্টীকারী ৬২. সমকামী ৬৩. মতভেদকারী ৬৪. কুকর্মকারী ৬৫. দেশ থেকে উচ্ছেদকারী ৬৬. সীমা লংঘনকারী ৬৭. সন্দেহ পোষণকারী ৬৮. স্বেচ্ছাচারী ৬৯. বাতিলপন্থী ৭০. শক্তিমান হওয়ার দাবীদার ৭১. মতানৈক্য সৃষ্টিকারী ৭২. দ্বিধাগ্রস্তকারী ৭৩. উপহাসকারী ৭৪. সত্য অপছন্দকারী ৭৫. বিদ্বেষকারী ৭৬. কুফরীকারী ৭৭. অনাচারী ৭৮. বেঈমান ৭৯. বৈরাগ্যবাদী ৮০. নাফরমান ৮১. বিরূদ্ধাচরণকারী ৮২. ব্যাভিচারী ৮৩. নিন্দুক ৮৪. চোগোলখোর ৮৫. কুৎসা রটনাকারী ইত্যাদি আরো বহু কারণ যার ফলে আমাদের দেশ ও পুরো বিশ্বের উপর করোনা ভাইরাসের মতো আযাব ও গযব নাজিল হয়েছে।

আল্লাহর কাছে আমরা এই বিপদের সময়ে ধৈর্য ধারণের শক্তি ও এর থেকে মাফ চাই। এই বিষয়গুলি যদি আমরা উপলব্ধি করে বর্জন করি তাহলেই আমরা ফিফটি পার্সেন্ট অর্জন করতে পারবো, আজাব গজব থেকে মুক্তি পাবো, জান্নাত পাবো। আগুন থেকে বাঁচাও পরিপূর্ন হবে। তাই আমাদের করোনা আযাব থেকে উপলব্ধির শিক্ষা নিতে হবে।

এএইচএম নোমান: লেখক, ‘একজন মুসলমান নিরক্ষরের- আল-কুরআনের সহজ বুঝ’ বই
Email: nouman@dorpbd.org

Print Friendly

Related Posts