সিনহা হত্যায় রিমান্ডে ওসি প্রদীপ এসআই লিয়াকত

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ র‌্যাবের আবেদনে সাবেক সেনা সেনাকর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসআই  লিয়াকত হোসেন, ওসি প্রদীপ এবং এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এছাড়া আত্মসমপর্ণ করা অন্য ৪ আসামি সহকারী উপ-পরিদর্শক লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন।

এরই মধ্যে ওসি প্রদীপসহ তিনজনকে র‍্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য ৪ জনকে পাঠানো হয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগারে।

এর আগে ৭ আসামি আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি এসআই লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ এবং এস আই নন্দলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

অন্য ৪ আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। একই সাথে অন্য দুই আসামি এসআই টুটুল এবং কনস্টেবল মোস্তফার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গত ৫ আগস্ট মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে মোট ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ মতে টেকনাফ মডেল থানা গতকাল বুধবার রাত সাড়ে দশটায় এ মামলাটি রুজু হয় এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতাল থেকে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে আত্মসমর্পণ করার কথা জানান, টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ।

আত্মসমর্পণ

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় প্রদীপ কুমার পুলিশ প্রহরায় নিয়ে আসা হয় কক্সবাজারে। বিকেল পাঁচটা পনেরো মিনিটের দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের গাড়িগুলো কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছে। সে সময় সড়কের দুই পাশে শত শত উৎসুক জনতা ওসি প্রদীপকে দেখতে ভিড় জমায়।

এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মামলার প্রধান আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ৬ পুলিশ সদস্য আদালতে হাজির হয়।

জামিন আবেদন
প্রদীপ কুমারসহ ৭ আসামি টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হেলাল উদ্দিন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন শুনানি হবে এমনটিই জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী আনোয়ারুল ইসলাম।

মামলার তদন্তে র‌্যাব
আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি তদন্তের জন্য র‌্যাবের কাছে বৃহস্পতিবার সকালে পাঠানো হয়। বিষয়টি টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম দোহা নিশ্চিত করেছেন।

গত শুক্রবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ খান।

ঘটনার পর পুলিশের দাবি করে, ‘ওই সাবেক সেনাকর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে এক সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন।

এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সেনাকর্মকর্তা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।’

তবে পুলিশের এই দাবি মানতে পারেনি নিহতের পরিবার। তারা মনে করছেন, রাশেদকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ আরও দাবি করে, সাবেক ওই সেনাকর্মকর্তার গাড়ি তল্লাশি করে ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, কিছু গাঁজা ও দুটি বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। ঘটনার পর দুটি মামলা করে পুলিশ।

সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার পর ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। এই সময়টায় আরও তিন সঙ্গীকে নিয়ে ‘নীলিমা’ নামের একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন তিনি।

ঘটনার দিন ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের কাজ শেষে করে ওই রিসোর্টে ফিরছিলেন রাশেদ এবং তার এক সঙ্গী।

#

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে যেভাবে নিহত মেজর সিনহা
Print Friendly

Related Posts