বাসাইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একের পর এক প্রাণহানি

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একের পর এক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। এতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারীই নেই।

এবছর (৭ আগস্ট) পৌরএলাকায় “টাঙ্গাইল পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বাসাইল জোনাল অফিস’’ থেকে মাত্র আধা কিঃমিঃ দূরে গোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বিদ্যুতের তারে জরিয়ে এক দিনমুজুর, (৩১জুলাই) উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের গিলাবাড়িতে বিদ্যুতস্পৃষ্টে নৌকা ডুবে মা-ছেলেসহ পাঁচজন, (২৩ জুলাই) ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকী বিলে বিদ্যুতের তারে জরিয়ে ষষ্ঠশ্রেনীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। মাত্র দুই সপ্তাহে সাত জনের মৃত্যুতে বাসাইলের সর্বস্তরের লোকজনের মধ্যে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নানা গাফিলতি নিয়ে ক্ষোভ এবং নানা আলোচনা সমালোচনা চললেও স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

বাসাইল পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় বোরো ধানচাষে আনুমানিক ১২ শতাধিক বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিল অথবা চকের উপর দিয়ে বিদ্যুতের মেইন লাইনের সংযোগ টাঙ্গানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নিচু এলাকা হওয়ায় প্রতিবছরই বর্ষার পনিতে এসব বিল এবং চকের উপর দিয়ে টাঙ্গানো বিদ্যুতের অধিকাংশ তারগুলি পানি ছুঁইছুঁই করে। বর্ষা মৌসুমে সেচপাম্পের সংযোগগুলি বিচ্ছিন্ন অথবা মেইন লাইনের তার হতে ঝুকিপূর্ন সংযোগগুলি বন্ধ করার জন্য প্রতিবছরই স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিলেও এসব বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। তারা বলেন বষার্ মৌসুমে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের লোকেরাই বিল অথবা চকের নিচু তারগুলি টেনে উপরে তুলে দেবে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ তারগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। গ্রাহক হিসেবে আমরা তাদের কাছে এটা প্রাপ্য।

কাউলজানী ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি মোঃ রুবেল মিয়া বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দূর্ঘটনার পর সম্প্রতি বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তারগুলি টেনে উঁচু করেছে। এই কাজগুলি প্রতিবছর পানি আসার আগেই তারা যদি করতো তবে এতো প্রানহানীর ঘটনা ঘটতো না।

ফুলকী ঝনঝনিয়া ডিগ্রী মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান বলেন, খুঁটি থেকে তারগুরি ঝুলে থাকার কারনে নৌকা চলাচলের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দূর্ঘটনা ঘটছে। তারগুলি টেনে সোজা করলে এসব দূর্ঘটনা ঘটতো না, যেটা বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতি। তাদের উচিত প্রতি বছর বর্ষা মোৗসুমে তারগুলি টেনে সোজা করা।
পৌরমেয়র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ বলেন, পল্লীবিদ্যুতের স্থানীয় কর্মচারীদের গাফিলতিতে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যে কারনে ইতিপূর্বে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং গতকালও এক দিনমুজুরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। পল্লীবিদ্যুতের স্থানীয় কর্মচারীদের উদাসীনতায়ই এসব লোকজনগুলি খুন হচ্ছে।

বাসাইল উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্(ইউএনও) শামছুননাহার স্বপ্না বলেন, ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে নৌকা চলাচলের সময় বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ রাখছি। গতকাল স্কুল সংলগ্ন দূর্ঘটনায় দিনমুজুর বিদ্যুৎস্পৃষ্টের বিষয়টি তদন্ত করছি। শুকনো মৌসুমে তারগুলি টেনে অথবা আরো উঁচুতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পল্লীবিদ্যুতের বাসাইল জোনাল অফিসের ডিজিএম কাজী মোঃ শওকতুল আলম বলেন, অতি ঝুঁকিপূর্ন সংযোগগুলি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগে লাল নিশান ,সাইনবোর্ড টেনে দিয়েছি।জনসচেতনতায় মাইকিং চলছে প্রতিদিন।পানি নেমে গেলে আরো উঁচু করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেব। আশা করছি ভবিষ্যতে এমন দূর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

 

Print Friendly

Related Posts