রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দিয়েছেন বঙ্গমাতা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তাঁর মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতির যে কোনও কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর (বঙ্গমাতার) বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারা বদলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমার মায়ের অবদান সম্পর্কে সবচেয়ে আকাঙ্খিত বিষয়টি হল আমার মা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে, আমি দুঃখের সাথে বলছি, অনেক বড় নেতাই তা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’

বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (৮ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেয়ার জন্য প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হলে জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি (বঙ্গমাতা) সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত আইয়ুব খানকে (আগরতলা ষড়যন্ত্র) মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পথও বদলে দিয়েছিল।তিনি (বঙ্গমাতা) দলকে যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করতেন (বিশেষত বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন) এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গণভবন থেকে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গোপালগঞ্জ থেকে অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা সংযুক্ত হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বঙ্গমাতাকেও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। যে কারণে তাঁকে (বঙ্গমাতাকে) বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা জানতেন এবং তাঁর বড় মেয়ে হিসেবে আমিও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু তিনি কখনও মনোবল হারাননি।’

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতাকে প্যারোলে মুক্তি দিলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বাকী আসামীদের কি হবে সেটা সব সময়ই বঙ্গমাতার চিন্তায় ছিল, কেননা ৩৫ জন আসামীর মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হককে কারাগারেই হত্যা করেছিল পাকিস্তানী সামরিক জান্তা।

এ সময় জাতির ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের সময়ও বঙ্গবমাতা যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এটি কোন লিখিত ভাষণ ছিল না বা এজন্য বঙ্গবন্ধু কোন রিহার্সেলও করেননি।’

ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে একটি কক্ষে খানিকটা বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়ে বঙ্গমাতা তাঁকে একান্তে যে কথা বলেন, সে সময়ে সে কক্ষে উপস্থিত পরিবারের অপর সদস্য শেখ হাসিনা সে কথাও ভাষণে তুলে করেন।

বঙ্গমাতা বলেছিলেন,‘তুমি বাংলার মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছ কাজেই তুমি জান কি বলতে হবে। তোমার মনে যা আসে তাই বলবে, কারো কথা শোনার দরকার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ জাতির পিতার ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কো কতৃর্ক বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে তাঁর স্থান করে নিয়েছে।’

আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার অবদান স্মরণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে বঙ্গমাতার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল যেখানে সে সময়কার অনেক বড় বড় নেতারাও বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন।’

শিশু একাডেমি প্রান্ত থেকে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে একশ’ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২শ’ সেলাই মেশিন এবং ১৩শ দরিদ্র নারীকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্ত থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারও বক্তৃতা করেন।

গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এছাড়া অনুষ্ঠানে সংযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

 

Print Friendly

Related Posts