মহাকাশে ছায়াপথের কৃষ্ণগহ্বর গবেষণায় নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ এ বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল জিতেছেন ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ-পদার্থবিদ রজার পেনরোস, জার্মান বিজ্ঞানী রেইনহার্ড গেঞ্জেল এবং আমেরিকার পদার্থবিদ আন্দ্রেয়া ঘেজ। কৃষ্ণগহ্বরদের নিয়ে নতুন নতুন রহস্য দানা বাঁধে আর মহাকাশবিজ্ঞানের এই অজানা দিক নিয়েই গবেষণা চালিয়েছিলেন তিন পদার্থ বিজ্ঞানী।

কৃষ্ণগহ্বরদের স্বভাব-চরিত্র, তাদের কার্যকলাপের পর্দা ফাঁস করেছিলেন। কীভাবে যুগ যুগ ধরে মহাকাশে রহস্যের জাল বিছিয়ে আসছে এই দানব কৃষ্ণগহ্বররা সেই নিয়ে গবেষণা করেই এ বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল জিতেছেন তারা।

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গণিতজ্ঞ রজার পেনরোসের গবেষণার দিক ছিল আপেক্ষিকতাবাদ ও কসমোলজি। ১৯৮৮ সালে পদার্থবিদ্যায় উল্ফ পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের থিওরি অব জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে পেনরোস প্রমাণ করেন মহাকাশে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব রয়েছে। রয়্যাল মেডেল (১৯৮৫), অ্যালবার্ট আইনস্টাইন মেডেল (১৯৯০), নেইলর প্রাইজ অ্যান্ড লেকচারশিপ (১৯৯১), জেমস স্কট প্রাইজ সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

জার্মান বিজ্ঞানী রেইনহার্ড গেঞ্জেল এবং আমেরিকার পদার্থবিদ আন্দ্রেয়া ঘেজের গবেষণা মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের দানবাকৃতি ব্ল্যাকহোল স্যাজিটেরিয়াস এ নিয়ে। জার্মান জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী গেঞ্জেল ম্যাক্স প্ল্যাক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্টিয়াল ফিজিক্সের কো-ডিরেক্টর এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। ইনফ্র্যারেড অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত রেইনহার্ড গেঞ্জেল। মহাকাশবিজ্ঞানের নতুন রহস্য উন্মোচনের জন্য বালজান প্রাইজ, হার্ভে প্রাইজ, শ প্রাইজ সহ একাধিক পুরস্কার জিতেছেন গেঞ্জেল।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক আন্দ্রেয়া এম ঘেজ। ছায়াপথের কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণায় গেঞ্জেলের সঙ্গে নোবেল ভাগ করে নিচ্ছেন তিনি। ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় আগেও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ঘেজ। ২০০৪ সালে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিকাল সোসাইটির শীর্ষ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হন আন্দ্রেয়া ঘেজ।

গেঞ্জেল ও ঘেজ দু’জনেই দেখিয়েছেন ছায়াপথের ঠিক মাঝখানে এক রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোল বিশাল বিশাল তারাদের দিয়ে ভূরিভোজ সারছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে সেই কৃষ্ণগহ্বরের নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’। ১৯৮২ সালে প্রথম গাণিতিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে ব্ল্যাকহোলের ছবি আঁকা হয়েছিল। ধীরে ধীরে মহাকাশের এই দানবদের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। আন্দ্রে ও ঘেজ দেখিয়েছিলেন, ব্ল্যাক হোল তার অত্যন্ত শক্তিশালী অভিকর্য বলের টানে সব কিছুকেই তার দিকে টেনে নিয়ে আসে। তার পর গপাগপ তাদের খেয়ে ফেলে। যে কোনও গ্যালাক্সিরই মাঝখানে থাকা ব্ল্যাকহোলের সর্বগ্রাসী খিদে থাকে। তা সে কোনও পদার্থ বা কণাই হোক, বা ঘন জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ, কাছে এসে পড়লে ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেগুলিকে গিলে নেয়। সেগুলি আর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।

খিদে মিটলে তার ভিতর থেকে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। যেগুলি আসলে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক্স-রে বা গামা-রশ্মির স্রোত। যতক্ষণ এই খাবার প্রক্রিয়া চলে, ততক্ষণ এই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসতে থাকে গ্যালাক্সি থেকে এবং মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে, এক্স রে নির্গমনও বন্ধ হয়ে যায়। তখন আলোর দপদপানি নিভে যায়।

Print Friendly

Related Posts