মেঘনার মহিউদ্দিন হত্যায় জব্দ অস্ত্রের ছবি দিয়ে মিথ্যা প্রচার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় সালিশে পিটিয়ে গোলাম মহিউদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যার পর আসামিপক্ষ এখন ভিকটিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।

তারা জানায়, `সত্যের সন্ধানে’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শুক্রবার পেজটির এ পোস্টে কয়েকটি ছবি দিয়ে বলা হয়, “১২/১১/২০২০/ কুমিল্লা মেঘনা চন্দনপুর ইউনিয়ন শিবনগর গ্রাম। তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করতে চাইছে বাধা দেওয়ার কারণে তাদেরকে কুপিয়ে নাজেহাল করছে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম কিছু ছবি এই সেই নিরীহ মানুষ গুলা ঢাকা হসপিটাল ভর্তি আছে।”
এতে আরো বলা হয়, “সন্ত্রাসী দল, তাদের বাড়ি ঘর লুট করেছে আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে বাড়িছাড়া করে রেখেছে।”
পোস্টে কিছু দেশীয় অস্ত্রের ছবি দেয়া হয়, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছে এই আসামিপক্ষ।

পরিবার জানায়, হত্যার পর মেঘনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহাবুদ্দিন মাস্টারদের প্রতিপক্ষ লুতফর গং এর ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে। সেগুলো বিজয়৭১ টিভি নামে একটি অনলাইন টিভি চ্যানেলে প্রচারও করা হয়। এখন সেই ছবি দেখিয়ে উল্টো বলা হচ্ছে, এসব অস্ত্র মহিউদ্দিন (নিহত) গং তাদের ওপর প্রয়োগ করে। ঘটনার ৯দিন পর তারা ফেসবুক পেজে তাদের পক্ষের লোকজনের কিছু জখমের ছবি পোস্ট করে। বাদীপক্ষ বলছে, লুৎফর রহমান গং নিজেরা জখম তৈরি করে ছবি পোস্ট করে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।

`সত্যের সন্ধানে’ নামে ফেসবুক পেজটিতে নিহত মহিউদ্দিনের স্বজনদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর লুটের মিথ্যা প্রচারও চালানো হয়।
ভিকটিমের পরিবার এ মিথ্যা লুটের অভিযোগ আনার আশঙ্কা আগেই করেছিল। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে নিহত মহিউদ্দিনের পক্ষের এ আশঙ্কার মধ্যেই গত ১৪ নভেম্বর হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি শাহ আলমের ঘর থেকে মালপত্র সরাতে যান তার আত্মীয়রা। খবর পেয়ে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান। ওই মুহূর্তে ভিকটিমের বাড়িতে অবস্থান করা তদন্ত কর্মকর্তা মেঘনা থানার এএসআই নাজিরও সেখানে যান। ঘর থেকে যেসব মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয় তিনি তা লিপিবদ্ধ করে নেন।

এছাড়াও ফেসবুকে অভিযো্গ করা হয়, তারা শাহাবুদ্দিন গংদের ভয়ে বাড়িছাড়া রয়েছে। অথচ তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে এবং সেই থেকে পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালিয়েছে।

জানা যায়, মহিউদ্দিনসহ তার আপন ভাইদের সঙ্গে চাচাতো ভাইদের বাড়ির পাশে আমবাগানের জায়গার সীমানা বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ ও মেম্বার আলফাজ উদ্দিনের উপস্থিতিতে মাপজোখ চলছিল। বিষয়টি এক বছর আগেই ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সালিশে মীমাংসার পর্যায়ে চলে আসে। ঘটনার দিন শুধু সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছিল। একই বাড়ির লুৎফর ও শাহ আলমসহ আরো কয়েকজনের জায়গাও ওই স্থানে রয়েছে। সেজন্য তারাও সালিশে উপস্থিত ছিলেন। সালিশে হঠাৎ মহিউদ্দিনের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন লুৎফর। এক পর্যায়ে লুতফর হুকুম দিলে তার ভাই-ভাতিজাসহ প্রায় ৩৫/৪০ জন চেয়ার, লাঠি, রড, দা, হাসুয়া দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। মারধরের একপর্যায়ে মহিউদ্দিন অচেতন হয়ে পড়েন। এসব অস্ত্র তারা রাস্তার ওপর রাখা লুৎফরের জিপ গাড়ি থেকে বের করে আনেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মহিউদ্দিনকে মাটিতে ফেলে কয়েকজনে মিলে বুকে ও মাথায় উপর্যুপরি ঘুষি লাথি ও ঘাড়ে হকিস্টিক, রড দিয়ে আঘাত করেন। এসময় মাথায়ও আঘাত পড়ে। মারপিটের একপর্যায়ে মহিউদ্দিন অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা স্পিডবোট নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি নিয়ে ড্রাইভার ইসরাফিল আলী পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনায় মহিউদ্দিনসহ (৬০) কয়েকজন রক্তাক্ত আহত হয়। বেলা ২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল আলম শিশির মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, মহিউদ্দিনকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল ও হামলাকারীদের ঘর থেকে রক্তমাখা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করে। এ হত্যার ঘটনায় ১৪ নভেম্বর (শনিবার) নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলার দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৮/২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় মুজিবসেনা ঐক্যলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লুতফর রহমানকে।

এফএ/ঢাকা

Print Friendly

Related Posts