যেভাবে তিনি ফুটবল ঈশ্বর

শাহ মতিন টিপু ॥ বোকাকে আর্জেন্টাইন শিরোপা জিতিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনায় পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জেতান।

ইংলিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে হাত দিয়ে গোল করেন তিনি, যেটাকে তিনি নিজেই ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে অভিহিত করেন। একই ম্যাচে ঝড়ের গতিতে ৬০ মিটার দূর থেকে দৌড়ে ইংলিশদের পাঁচ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটি করেন। ২০০২ সালে ফিফা ডট কম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।

বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেশে ফেরার পর তাকে আর্জেন্টাইনরা ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেন। এমনকি তার ভক্তদের একটা অংশ ‘চার্চ অব ম্যারাডোনা’ প্রতিষ্ঠা তার আরাধনাও শুরু করেন।

এক বছর পর ইতালির নাপোলিকে প্রথমবারের মতো সিরি আ’র শিরোপা জেতান ম্যারাডোনা। তিন বছর পর আবারও নাপোলিকে শিরোপা স্বাদ দেন তিনি। ইতালির ওই শহরেও তাকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা শুরু হয়। সেখানেও তার নামে চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন একদল ভক্ত। কিন্তু ততদিনে তার অধঃপতন শুরু হয়ে গেছে।

১৯৯০ বিশ্বকাপে দুর্বল দল নিয়েও ফাইনালে উঠে যায় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কেঁদে ভাসিয়ে দেন ম্যারাডোনা।

এক বছর পর ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। শেষ হয়ে যায় নাপোলি ক্যারিয়ার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সেভিয়ায় এক মৌসুম শেষে ইউরোপ ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সেখানে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে খেলার পর বোকায় ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু সেখানেও বেশীদিন থাকা হয়নি তার। ১৯৯৭ সালে তার ক্লাব ক্যারিয়ারও সেখানেই শেষ হয়।

২১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৬৭৯ ম্যাচে ৩৪৬ গোল করেছেন।

শত বিতর্ক সত্ত্বেও ২০০০ সালে ম্যারাডোনাকে পেলের সাথে যৌথভাবে বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে ফিফা।

তবে কোচ হিসেবে ম্যারাডোনার সাফল্য কখনোই তার খেলোয়াড়ি জীবনের ধারেকাছে যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাকে। তবে কোচ হিসেবে সাফল্য না পেলেও নামের জন্যই তার অফারের অভাব হয়নি, তা সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মেক্সিকোর ক্লাব কিংবা নিজ দেশের হিমনেশিয়া এসগ্রিমা লা প্লাতাই হোক না কেন। কারণ তার  নামটাই তো যথেষ্ট এমনই সে নাম, যার কোনো তুলনা হয় না।

১৯৮৬’র বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ম্যারাডোনা তার ক্যারিয়ারের পুরো সময়ই আলোচনায় ছিলেন। এমনকি অবসরের পরও তিনি বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। শৈল্পিক ফুটবলের পাশাপাশি বিতর্কে নাম জড়িয়েছেন অসংখবার।

পুরো নাম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। খ্যাতি আর বিতর্ক যার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। সীমাহীন ভালোবাসায় পূর্ণ ও বাঁধনহারা এক জীবন তার।

গত অক্টোবর নিজের ৬০তম জন্মদিন পালন করেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি এ মহাতারকা। যদিও  করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সেলফ-আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। গত ২০ বছর দু’বার হার্ট অ্যাটাক এবং হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে চলে গেলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। বুধবার (২৫ নভেম্বর) শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার।

Print Friendly

Related Posts