ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছে। তারা তাদের অবস্থান হারিয়েছে এবং দেশের রাজনীতিতেও বর্তমানে দলটির কোন জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৩০ অক্টোবর বুধবার প্রকাশিত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস একথা বলেন। এই সংবাদমাধ্যমের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধান জন রিড ঢাকায় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবেই তার (শেখ হাসিনার) কোন জায়গা নেই, আওয়ামী লীগের কোন জায়গা নেই। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা তাদের স্বার্থ বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।
আওয়ামী লীগ সম্ভবত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে জানালেও সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে, তার অন্তর্বর্তী সরকার দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, কারণ এটি কোন রাজনৈতিক সরকার না। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতেই নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ তুলছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য এফটিকে জানিয়েছেন, যেকোন সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।
নির্বাচনের সময়সূচী সম্পর্কে কিছু না জানালেও ড. ইউনূস বলেন, আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোন ইচ্ছা নেই। আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত। রায় প্রকাশের পর, আমরা ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব। আমি মনে করি, রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই বিষয়ে কিছু করার নেই।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অবশ্য গত আগস্টে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার মায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তিনি (শেখ হাসিনা) দেশে এসে আইনের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত, কারণ তিনি কোন অপরাধ করেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইউনূস সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে, ভারত যেভাবে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতার অভিযোগ তুলেছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এই বিষয়ে ড. ইউনূস ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। এসব ঘটনা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। (আগস্টে হামলার শিকার) অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
ভারত এবং দেশটির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।