বাংলাওয়াশই চির সত্য

বিডি মেট্রো নিউজ ।। সেই বাংলাওয়াশই চির সত্য হয়ে ‍উঠলো জিম্বাবুয়ের জন্য। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ৬১ রানে হারালো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে জয়ের জন্য ২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৩.৩ ওভারে ২১৫ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। এতে ৬১ রানের জয় তুলে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও সবগুলো ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল সফরকারীরা।

বুধবার দুপুর ১টায় ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১৪৭ রান তুলে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। অর্ধশতক তুলে নিয়ে দু’জনেই আউট হন ৭৩ রানে।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর স্বাগতিকরা দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালে বড় সংগ্রহ গড়ার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহর ৪০ বলে ৫২ ও অধিনায়ক মাশরাফির ১১ বলে ১৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৯ উইকেটে ২৭৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে লুক জংয়ে ৫০ রানে ২টি ও গ্রায়েম ক্রেমার ৫৩ রানে ২টি উইকেট নেন।
২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ওভারেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চামু চিবাবাকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে বাংলাদেশে শিবিরে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার মুস্তাফিজ। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড আউট হয়ে ফেরার আগে চিবাবা করেন ৪ রান।
এরপর ইনিংসের সপ্তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন তরুণ পেসার মুস্তাফিজ। এবার তার শিকার আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চামু চিবাবা। দলীয় ৪৩ রানে নাসির হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ১৭ রান।
ইনিংসের নবম ওভারে বোলিংয়ে এসেই নাসির হোসেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান ক্রেইগ আরভিনকে সাজঘরে ফেরত পাঠালে দলীয় ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। নবম ওভারের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরার আগে আরভিন করেন ২১ রান।
এরপর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা ও শ্যেন উইলিয়ামস। প্রাথমিক চাপ সামাল দিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলীয় সংগ্রহে ৮০ রান যোগ করেন তারা।
২৩তম ওভারে বোলিংয়ে এসে জুটি ভাঙ্গেন সাব্বির রহমান। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরাকে বোল্ড করে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন এই লেগ স্পিনার। দলীয় ১২৭ রানে সাব্বিরের ঘূর্ণিতে কাটা পড়ার আগে চিগুম্বুরা ৪৭ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন।
চিগুম্বুরার বিদায়ের পর ম্যালকম ওয়ালারকে সঙ্গে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামস। পঞ্চম উইকেটে তারা দলীয় সংগ্রহে আরও ৫৯ রান যোগ করেন।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ম্যালকম ওয়ালারকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে জুটি ভাঙ্গেন পেসার আল-আমিন হোসেন। দলীয় ১৮৬ রানে নাসির হোসেনের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে ওয়ালার করেন ৩২ রান।
ওয়ালারের বিদায়ের পর উইলিয়ামসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরের ওভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বোলিংয়ে এসে উইলিয়ামসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগেই অবশ্য অর্ধশতক তুলে নেন উইলিয়ামস। শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার আউটে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৮৮।
এরপর ৪১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে আবারও জোড়া আঘাত হানেন পেসার মুস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে সিকান্দার রাজা ও লুক জংয়েকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। রাজা ৯ ও জংয়ে ১১ রান করেন। তাদের বিদায়ে ৪১ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ২১০ রান।
নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে আবারও আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এবার তার শিকার টিনাশে পানিয়াঙ্গারা। মুস্তাফিজকেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন পানিয়াঙ্গারা। তিনি করেন ৩ রান।
এরপর ৪৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসে বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটসম্যান তাউরাই মুজারাবানিকে তুলে নিলে ২১৫ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
একই মাঠে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৪৫ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৮ রানে জিম্বাবুয়েকে হারায় স্বাগতিকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ৭৩, ইমরুল ৭৩, মাহমুদুল্লাহ ৫২; লুক জংয়ে ৫০/২, গ্রায়েম ক্রেমার ৫৩/২)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.৩ ওভারে ২১৫/১০ (উইলিয়ামস ৬৪, চিগুম্বুরা ৪৫, ওয়ালার ৩২; মুস্তাফিজ ৩৪/৫)।
ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ম্যান অব দ্য সিরিজ: মুশফিকুর রহিম
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts