মেট্রো নিউজ ।। মা-বাবাকে হত্যার আগে একবার নিজেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ঐশী। এজন্য বিশাল একটি সুইসাইড নোটও লিখেছিলেন তিনি। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঐশীর শোবার ঘর তল্লাশি করে হাতে লেখা ওই নোটটি উদ্ধার করে। তবে সেটি ঐশী কবে লিখেছেন বা কার কাছে লিখেছেন, তার উল্লেখ নেই।
স্কুলখাতার ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা ওই চিঠিতে ঐশী লিখেছেন, মা-বাবাসহ কেউ তাকে বোঝার চেষ্টা করেনি। কেউ ভালো দিকগুলো দেখেনি। সবাই শুধু তার খারাপ দিকগুলো খুঁজে বেড়িয়েছে।
সম্বোধনহীন ওই সুইসাইড নোটজুড়েই জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা, না পাওয়ার বেদনা আর নানা কষ্টের স্মৃতি ফুটে উঠেছে। এতে এক স্থানে লেখা রয়েছে, ‘কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে।’
খাতার পৃষ্ঠাজুড়ে ঐশী লিখেছেন, ‘আমি জানি না, এ চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আরও কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। আমার এ চিঠিটাকে সুইসাইড নোটও বলা যেতে পারে।’
কারও নাম উল্লেখ না করে ঐশী লিখেছেন, ‘তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনোদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি। আমার অনেক খারাপ দিক আছে, সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ! আমার এই চিঠিটি তাদের দেখাতে লজ্জা ও ঘৃণা লাগে।…আমি জানি, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল- জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল, কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না।’
ভাইয়া/আপু সম্বোধন করে চিঠির আরেক জায়গায় লেখা রয়েছে, ‘এমন কোনোদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুটো বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুটো বছর একা একা কাটালাম। এ দুটো বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না। এসব বলা এখন অর্থহীন। মনের ভেতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাব। জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে।’
ঐশী লিখেছেন, ‘জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম, এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি, জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, ক্লান্তি, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙে গেলে এ ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুকভাঙা কান্নার কি কোনো দাম নেই।’
চিঠির শেষের পৃষ্ঠায় ঐশী লিখেছেন, ‘লেখার মতো আরও অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে, এমন কেউ নেই। থেকেও যেন নেই। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের! আমি ভাবব, একসময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিল!’