‘পুত্রবধূকে বলবেন, উনি যেন মানুষ না পোড়ায়’

মেট্রো নিউজ, বগুড়া : বিএনপি জোটের আন্দোলনে গাড়িতে পেট্রোল বোমায় হতাহতের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেত্রীকে এ পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধের জন্য তার শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়ায় বৃহস্পতিবার জনসভায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আজ শান্তিতে আছে। কিন্তু মানুষের শান্তি কখনোই সহ্য হয় না বিএনপি নেত্রীর। দেশে বসে দেশের মানুষ মেরেছেন। এখন উনি বিদেশে গেছেন।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে যেভাবে, এই বগুড়াও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি, এখানেও তারা আক্রমণ করেছে।

“নির্বাচনতো ঠেকাতে পারেন নাই, ১৪৫ জন মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মসজিদ, মন্দির, স্কুলে আগুন দিয়েছে। শুধু মানুষ হত্যা ছাড়া আর কোনো কিছু তারা দেখে না।”

নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া ভুল করেছিলেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “কিন্তু নির্বাচন ঠেকানোর নামে মানুষ হত্যার মত জঘন্য, ঘৃণ্য কাজ তিনি করেছেন যে, সারাজীবন তিনি এবং তার ছেলে খুনী হিসেবে জনগণের কাছে চিহ্নিত হবে। তারা খুনি হিসেবেই এদেশে পরিচয় লাভ করেছে।”

বগুড়াবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আপনাদের যে পুত্রবধূ (খালেদা) আছেন তাকে একটু বলবেন, উনি যেন কখনো মানুষ না পোড়ায়। আর আপনাদের দেশে একটা কুলাঙ্গার আছে। ওই কুলাঙ্গারটাকেও বলবেন যে, মানুষ পোড়ানো যেন বন্ধ হয়।”

বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর ‘ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এই বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হতে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বিশ্বাস করে।

সকালে বগুড়া পৌঁছে সেনানিবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেচ্ছা খেলার মাঠে জনসভায় আসেন বেলা ৩টার দিকে। ততক্ষণে জনসভায় আসা মানুষে ভিড় মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা ও শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে।প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শহর ও আশপাশের মহাসড়কগুলো তোরণ, ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

বিএনপি-জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় দীর্ঘদিন পর শেখ হাসিনার সফর ঘিরে ছিল উৎসাহ, উদ্দীপনা।

বক্তব্যে বগুড়াবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে কিছু উপহার দিতে এসেছি।” ১৯টা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। বগুড়ার উন্নয়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বগুড়া এক সময় শিল্পসমৃদ্ধ ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, বগুড়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে বগুড়া পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হবে। এছাড়া ক্রীড়া, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বগুড়ার জন্য আরও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানান সরকার প্রধান।

জনসভায় অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts