এল অগ্রহায়ণ, এল নবান্ন

শাহ মতিন টিপু : আজ অগ্রহায়ণের প্রথম দিন, আজ নবান্ন উৎসবের দিন। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে বাংলার কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকমের খাবার; বাড়ির আঙিনা নতুন ধানের ম-ম গন্ধে ভরে ওঠে। ফসলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরায়ত। কারণ, ফসল আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। সংগত কারণে আনুষ্ঠানিক হোক কিংবা অনানুষ্ঠানিক, কৃষক মনে আন্দোলিত হয় এই নবান্ন উৎসব।

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। অগ্রহায়ণের শুরুতেই এপার বাংলা ও ওপার বাংলাতে চলে উৎসবের নানা আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় হলুদ-সবুজ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভাসতে থাকে। কারণ, কৃষকের ঘর ভরে উঠবে গোলা ভরা ধানে। স্মরণাতীত কাল থেকে বাঙালির জীবনে পয়লা অগ্রহায়ণকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক সুদিন। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ।

কৃষকের মাঠে এখন সোনারঙা ধানের ছড়াছড়ি। সারা দেশেই আমন ধান কাটার উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কৃষক রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান কেটে নিয়ে আসে ঘরে। আগে এমন দিনে ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়াত বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হতো বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকির তালে মুখরিত হয় না। তারপরও নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেওয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশে। তৈরি হবে নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর-পায়েস। কৃষক-কৃষাণীরা নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

 

nobann-metronews

দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্নে বাড়ির জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইয়র’ আনা হয়। নবান্ন আর পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই। তাই অগ্রহায়ণ এলেই সর্বত্র ধ্বনিত হয়, ‘আজ নতুন ধানে হবে রে নবান্ন সবার ঘরে ঘরে।’ নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে মিলাদ পড়ানো হয়। মসজিদে শিরনি দেওয়ার রেওয়াজও আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজনও চলে।

নবান্ন উৎসব হিন্দুদেরও একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts