বিডি মেট্রো নিউজ ।। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করে। রিভিউ খারিজের এক দিনের মধ্যে আজ শেষ বিকালে প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতির সাক্ষরিত এই রায় প্রকাশ হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় পুলিশ প্রহরায় বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে রিভিউর রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়। রাতেই ট্রাইব্যুনাল রায়ের কপি ঢাকার জেলা প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। কারা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে এই রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে।
এই সব প্রস্তুতির মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আইনগত বিষয় যাচাই-বাছাই করেই রায় কার্যকর করা হবে। সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
কারা সূত্র জানায়, দুই জনকে রায়ের কপি পড়ে শোনানো হবে এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে এর আগে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন, সেক্ষেত্রে রায়ের কপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর নির্বাহী আদেশের ফাইল প্রস্তুত করে তা পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করার পরই রায় কার্যকর করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে কারাগারের ভেতরে সাক্ষাত করেছেন স্বজনরা। অপর দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারা ফটকে পুলিশ, কারারক্ষীর পাশাপাশি রাবও দায়িত্ব পালন করছে। কারাগারের আশেপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কারাগারের আশপাশের উচুঁ ভবনের ছাদেও বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা।
কারা অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যে কোন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য কারাগার প্রস্তুত থাকে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ক্ষেত্রেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আদালতের রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে না। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সে অনুয়ায়ি বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হবে। আর কপি আসার পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে, সেক্ষেত্রে রায়ের কপি অনুয়ায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফাঁসির মঞ্চ
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিন সীমানা প্রচীর ও ভবনের মাঝখানে একটি খালি জায়গায় স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ। যা দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট ও প্রস্তে ৩০ ফুট। মঞ্চের পাটতন কাঠের এবং কাঠের নিচে কুয়া সদৃশ্য গর্ত। যুগের পর যুগ এই এই স্থানটিকেই ফাঁসির স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেল খানায় এই স্থানটি ফাঁসির মঞ্চ নামে পরিচিত। ফাঁসি কার্যকর করার আগে মঞ্চটিকে ঘিরে প্যান্ডেল টানানো হয়। যাতে বাইরে থেকে কেউ প্যান্ডেলের ভেতরের ঘটনাবলি দেখতে না পারে। এরপর সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে নির্ধারিত সময় মৃত্যুদন্ড তথা ফাঁসি কার্যকর করা হয়।