বিডি মেট্রো নিউজ ।। আচরণে ঔদ্ধত্য আর অভিব্যক্তিতে ব্যঙ্গ- এসব কারণে আশির দশক থেকে সংবাদের শিরোনামে থাকতেন রাজনীতিক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষে রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
শুধু গণহত্যা নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালাউদ্দিন, যিনি সাকা চৌধুরী নামেই খবরে এসেছেন বেশি।
সে সময় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা।
ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফকা চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।
পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রাজনীতি শুরু করেন মুসলিম লীগের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিম লীগ সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাকা চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। তার বেড়ে ওঠাও চট্টগ্রামে।
কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৯৬ সালে সাকা বিএনপির মার্কায় নির্বাচন করে সাংসদ হন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।
এরশাদের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সাকা চৌধুরী। আর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তাকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা। রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ হন তিনি।
ফকা চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবার বড়। তার সেজ ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি। অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রয়াত সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে সারসরি যুক্ত ছিলেন না।
আত্মীয়তা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সূত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলে নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করে আলোচনা ও নিন্দা কুড়ান সাকা। বিএনপিতে থেকেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন দলের ভেতরেই।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সাদিক পাবলিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন সাকা।
সাকার দাবি, এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাকিস্তানে যান তিনি। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেছেন বলে একটি সনদও তিনি এ মামলার বিচারের সময় উচ্চ আদালতে দাখিল করেন। তবে ওই সনদ জাল সাব্যস্ত হওয়ায় উচ্চ আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়।