বিডি মেট্রোনিউজ ।। পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা ও উপজেলা শহরগুলো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মুখর। ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর মনোনয়পত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য রাজধানীতে আগ্রহী প্রার্থীরা জোর লবিং চালাচ্ছেন।
সরকার দলীয় এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, প্রভাবশালী নেতাদের বাসায়, সচিবালয়ে গিয়ে তদবীর করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা শীর্ষস্থানীয় নেতারা ছাড়াও চেয়ারপারসনের কাছাকাছি থাকা নেতাদের সাথে যোগাযোগ, দেখা করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাথে জেলা, উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট নেতাদের সঙ্গী করে এনেছেন।
বিএনপি আজকালের মধ্যেই পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে। প্রতিটি পৌরসভায়ই তারা প্রার্থী দেবে। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে ২০ দলীয় জোটে থাকলেও এই নির্বাচনে বিএনপির সাথে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে কোনরকম সমঝোতায় আসবে না। জামায়াত প্রায় দেড়শ পৌরসভায় প্রার্থী দেবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় তাদের প্রার্থীরা হবেন স্বতন্ত্র। দলের শুধু পৌর এলাকারই নয়, জেলা, উপজেলা নেতা-কর্মীরা সংশ্লিষ্ট পৌরসভা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই অনেকে মাঠে নেমে কার্যক্রম শুরু করেছেন। মহিলা কর্মীদের তারা বাড়ি বাড়ি পাঠাচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের যাতে গ্রেফতার, হয়রানী করা না হয় তার নিশ্চয়তা চেয়েছে জামায়াত। গ্রেফতারের ভয়ে অনেক নেতা-কর্মী জোরালো তৎপরতা চালাতে পারছেন না।
জামায়াত সূত্র জানায়, বিএনপির সাথে তারা কোথাও কোন সমঝোতায় আসবেন না। তারা আশা করছেন, বাধা, ভয়-ভীতিমুক্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারলে তাদের প্রার্থীরা অনেক ভাল করবে। পৌরসভা এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে ভূমিকার জন্য এবং ব্যক্তিগতভাবেও বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হবে।
জাতীয় পার্টি সব পৌরসভায় প্রার্থী দিতে চাইলেও সব পৌরসভায় তাদের যোগ্য, জনপ্রিয়, প্রার্থী নেই। সকল পৌরসভায় মনোনয়ন দেয়ার জন্য তারা প্রার্থী খুঁজছেন। সরকারে থাকলেও জাতীয় পার্টি কোথাও সরকার দলীয় প্রার্থীদের সাথে কোন সমঝোতায় না এসে এককভাবেই নির্বাচন করবে।
বিএনপির অনেক যোগ্য, জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলেও সকলে নির্বাচনী মাঠে নেই। অবরোধের সময় দায়ের করা মামলার আসামী হিসেবে তারা জেলে অথবা পলাতক। পলাতক অবস্থায় থেকেও অনেকে এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন। প্রচার কাজও শুরু করেছেন। তবে একটা ভীতি কাজ করছে তাদের মধ্যে। বিএনপির বিকল্প প্রার্থীও রয়েছে প্রত্যেক পৌরসভায়।
আওয়ামী লীগের দুই থেকে তিনজন, কোথাও আরো অধিক সংখ্যক প্রার্থী রয়েছে প্রত্যেক পৌরসভায়। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ঢাকার সংশ্লিষ্ট জেলার মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় ধর্না দিচ্ছেন। সচিবালয়েও ভীড় করছেন। একই অবস্থা বিএনপিতে।
মনোনয়ন দেয়া নিয়ে বড় দুই দলই সমস্যায় পড়েছে। সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা বিচার করে মনোনয়ন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত দুই দলেরই। কেউ যাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন লাভে অবৈধ ভূমিকা রাখতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নীতি নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়র পদে মনোনয়নে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে হবে। এজন্য প্রতিটি দলকে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি বা কর্তৃপক্ষ গঠন করে তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এ ব্যবস্থার বিপক্ষে নয়। কাদের সমন্বয়ে এই কমিটি বা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক ছাড়াও দু’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। জেলা কমিটির প্রতিনিধিও এতে রাখা হতে পারে। একইভাবে বিএনপিতেও কমিটি গঠন করা হবে।
আওয়ামী লীগ থেকে জেলা এবং পৌর/উপজেলা কমিটি এবং বিএনপিও জেলা কমিটির লিখিত মতামত চাইবে। দুই দলের নেতারাই মনে করছেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও তা হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার হবে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, শেষপর্যন্ত জামায়াত যদি বিএনপির সাথে গোপন সমঝোতায় না আসে তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অনেক ভাল করবেন। বিএনপি থেকে এরইমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হবে না।