বরিশালের কাছে ‍উড়েই গেল চিটাগং

বিডি মেট্রোনিউজ ।। বলা যায়, বরিশালের কাছে ‍উড়েই গেল চিটাগং। বরিশালের সামনে কোনো বাধাই হতে পারেনি তামিমের ভাইকিংস। অনায়াসেই জয় কেড়ে নিল বরিশাল বুলস।

বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংস ও রবিশাল বুলস। প্রথমে ব্যাট করে বরিশাল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৫ ওভারে ১৩৭ রানেই অলআউট হয় চিটাগং ভাইকিংস। ফলে চেনা কন্ডিশনেও বরিশালের বিপক্ষে ৩৩ রানে হারের তিক্ত স্বাদ পায় তামিম ইকবালের দল।

১৭১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ রানেই ৫ উইকেট হারায় চিটাগং। এরপর মোহাম্মদ আমির ও নাঈম ইসলাম মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি এই জুটি।  চিটাগংয়ের হয়ে ৩৮ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসটি আসে নাঈম ইসলামের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান করেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। তা ছাড়া ওপেনিংয়ে নামা তিলকারত্বে দিলাশানের ১৯ ছাড়া আর কেউ বড় কোনো ইনিংস না খেলতে পারায় জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলতে পারেনি চিটাগং।

বল হাতে বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন কেভিন কুপার। দুটি উইকেট পান আল-আমিন হোসেন। তা ছাড়া একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ সামি, তাইজুল ইসলাম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের শুরুটা ছিল হতাশার। মাত্র ১২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়েছিল বরিশাল বুলস। তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ফিফটি আর সিকুজি প্রসন্নর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের পুঁজি গড়েছে তারা।

বরিশালের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার ৪৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও একটি ছক্কার মার। আর প্রসন্ন ২০ বলে ৪টি ছক্কা ও এক চারের সাহায্যে ৩৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন।

সোমবার বিপিএলের চট্টগ্রাম-পর্বে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন চিটাগং অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ঘরের মাঠে স্বাগতিকদের বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। প্রথম তিন ওভারেই বরিশালের তিন উইকেট তুলে নেন চিটাগংয়ের বোলাররা।

শুরুটা করেছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। প্রথম ওভারেই এই লঙ্কান স্পিনারের হাতে বল তুলে দেন তামিম। দিলশানের দ্বিতীয় বলে একটি চার মেরেছিলেন বরিশাল ওপেনার এভিন লেউইস। তবে পরের বলেই লেউইসকে (৪) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন দিলশান।

ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারে আঘাত হানেন পেসার মোহাম্মদ আমির। এবার পাকিস্তানি পেসারের বলে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউ রনি তালুকদার। পরের ওভারে আরেক পেসার শফিউল ইসলাম নিজের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন সাব্বির রহমানকে। সাব্বিরও ডাক মারেন। আর বরিশালের স্কোর দাঁড়ায় ১২/৩।

শুরুতেই তিন উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মেহেদী মারুফ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এনামুল হক জুনিয়রের বলে লং-অনের ওপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান মারুফ। পরের ওভারে এল্টন চিগুম্বুরাকেও স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেন টাঙ্গাইলের এই ব্যাটসম্যান।

তবে জিয়াউর রহমান নিজের প্রথম ওভারেই মারুফকে ফিরিয়ে ৪০ রানের জুটি ভেঙে দেন। ২৫ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ২৮ রান আসে মারুফের ব্যাট থেকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে নতুন ব্যাটসম্যান নাদিফ চৌধুরীকেও বিদায় করেন জিয়াউর। এই মিডিয়াম পেসারের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হন নাদিফ (৭)।

নিজের তৃতীয় ওভারে মাহমুদউল্লাহকে রানআউট করতে পারতেন জিয়াউর। দুই রান নিতে গিয়েও ঘুরে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে ফেরার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। ডিপ মিডউইকেট থেকে থ্রো করেছিলেন ফিল্ডার। মাহমুদউল্লাহ তখনো ক্রিজেই পৌঁছাতে পারেননি। কিন্তু বল ধরে আগেই হাত দিয়ে বেল ফেলে দেন জিয়াউর। এর পরেই তার দুই বলে বিশাল দুটি ছক্কা হাঁকান সিকুগে প্রসন্ন।

জিয়াউরের পর শফিউলের তিন বলেও দুটি ছক্কা হাঁকান প্রসন্ন। ইনিংসের ১৭তম ওভারে আমির এসে থামান প্রসন্ন-ঝড়। ২০ বলে ৪টি ছক্কা ও এক চারে ৩৬ রানের ঝোড়ো ইনিংসটি খেলেন এই লঙ্কান স্পিন অলরাউন্ডার। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মাত্র ৩৩ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন প্রসন্ন।

প্রসন্ন ফিরে গেলেও ফিফটি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। চিগুম্বুরার করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষে বলে আউট হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। তার ৪৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও একটি ছক্কার মার।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭০ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে বরিশাল। ১১ বলে দুই ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন কেভন কুপার। চার বলে ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মোহাম্মদ সামি। শেষ সাত ওভারে ৯৮ রান সংগ্রহ করে বরিশাল।

চিটাগংয়ের পক্ষে আমির ও জিয়াউর দুটি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া দিলশান, শফিউল ও চিগুম্বুরার ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট।

বিপিএলের ঢাকা-পর্বে চার ম্যাচের তিনটিতেই হারের তিক্ত স্বাদ পাওয়া তামিমরা ঘরের মাঠে জয়ে ফেরার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেই আশ্বাস পূরণ করতে পারেননি ঘরের মাঠেও।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts