পৌর নির্বাচন জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ব্যারোমিটার

বিডি মেট্রোনিউজ ।। পৌরসভা নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও সময়ের প্রেক্ষাপটে এর রাজনৈতিক-আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এই নির্বাচনকে বড় দুই দল এবং দুই নেত্রীর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ব্যারোমিটার হিসাবেও দেখা হচ্ছে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং তার ফলাফলের উপর আগামীর রাজনীতি অনেকাংশেই নির্ভর করছে।

বিএনপি ও তার জোটের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ পৌরসভায়ও জয়ী হলে তা সরকারের রাজনৈতিক পরাজয় বলে প্রচার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের জয়ের ক্ষেত্র তৈরি ও জনমত সংগঠিত করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবস্থার করতে প্রয়াসী হবে।

আর সরকারি দল জালিয়াতি, অসাধুতা, সন্ত্রাসের আশ্রয় নিলে, নির্বাচন প্রভাবিত করলে বিএনপি ও তার সহযোগিরা তা সরকার বিরোধী আন্দোলনের অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করেন সরকারি হস্তক্ষেপ, প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের প্রার্থীরা জয়ী হলেও কারচুপি, জাল-জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিএনপি গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য অন্তবর্তী সরকারের দাবি ছাড়া অন্য কোন ব্যাপক ভিত্তিক ইস্যুও তাদের সামনে নেই।

সরকারের একজন নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতা বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেবে সরকার। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের উপর সরকারের ক্ষমতায় থাকা না থাকা নির্ভর করে না। ফলাফল বিরুপত্ত যদি হয় তা সরকার ও সরকার প্রধানের জনপ্রিয়তার উপর আঘাত আনবে না।

এ প্রসঙ্গে ওই নেতা উল্লেখ করেন, বিগত সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচনে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের পরও বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় সরকার লাভবান হয়েছে। সরকার প্রমাণ করেছে যে, সুষ্ঠু, অবাধ, প্রভাব ও হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার আন্তরিক। যদিও ফলাফল ঘোষণার দু’ঘণ্টা আগেও বিএনপি থেকে নির্বাচনে সরকার দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল। ফলাফল ঘোষণার পর অবশ্য বিএনপি এ নিয়ে মুখ খোলেনি।

পৌরসভা নির্বাচনেও কোনরকম হস্তক্ষেপ, প্রভাবমুক্ত, সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠানকে গুরুত্বের সাথে দেখছে সরকার। বিএনপি ও তার মিত্ররা তা মনে করছে না। তাদের মতে, সরকারের অবশিষ্ট ভাবমূর্তিও এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিলীন হয়ে যাবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটার সাধারণ ভোট দিতে না পারার দুঃখ কিছুটা হলেও দূর করবে এই নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার মাধ্যমে।

তারা আশা করেন ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে কমপক্ষে দেড়শ আসনে জয়ী হবেন তাদের মনোনীত প্রার্থীরা। তার বেশি সংখ্যক পৌরসভায় জয়ী হলেও বিস্ময়ের হবে না। তাদের আশঙ্কা সরকারি দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিরা পরোক্ষাভাবে নানা কৌশলে নির্বাচন প্রভাবিত করবেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সরকার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেন, এ ধরণের অভিযোগ বিএনপি বরাবরই করে আসছে। পরবর্তীতে যা অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। ২৩৪টির মধ্যে ১৯৮টি পৌরসভায়ই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মেয়র হিসেবে রয়েছেন। তারা জনপ্রিয়। নিজেদের যোগ্যতা, দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে উন্নয়ন কাজ করেছেন।

তাঁর প্রত্যাশা, স্থানীয় ভোটাররা নিশ্চয়ই তার মূল্যবান করবেন। আগামীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জোটের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা মানুষ দেখছেন না। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতই অনিশ্চিত।

অপরদিকে সরকারি দলের এমপি, মন্ত্রীদের দিয়ে পৌরসভায় অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদেরই বেছে নেবেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশ্বাস। বিএনপি মনে করে ভোটারদের উন্নয়নের স্বার্থে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যেই প্রধানত্ব আওয়ামী লীগ এমপিদের প্রচারণার সুযোগ চাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার হলেও এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় দেশে এবং বিদেশে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। সরকারি দল ও বিএনপি এবং দুই শীর্ষ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এই নির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উভয়ের জন্যই তা পরীক্ষা। জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্বাচনী এলাকাসহ গোটা দেশের মানুষ এবং বিদেশিদেরও গভীর আগ্রহ এই নির্বাচনকে ঘিরে। পৌরসভা নির্বাচন সরকারের থাকা না থাকার ব্যাপার না হলেও ফলাফলকে কেন্দ্র করেই আগামীর রাজনীতি আবর্তিত হবে।

বড় দুই দলই সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। সেইসাথে বিএনপি যোগ করবে ব্যাপকভাবে গ্রেফতারকৃত দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং নিরপেক্ষ অন্তবর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি। যুদ্ধাপরাধের দায়যুক্ত জামায়াতকে সঙ্গী করে দলীয় এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপির জন্য এক বিরাট পরীক্ষাও।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts