নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চায় প্রতিবন্ধীর‍াও

বিডি মেট্রোনিউজ ।। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১,২১,৬৫,৫৯১ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৭,০৩,১৮২ জন বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। আর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও কমপক্ষে ৭ লাখ ৩০ হাজার প্রতিবন্ধী ভোটার ভোট দিতে পারেন না। আজ বুধবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

২০০৮-২০১৫ সময়কালের মধ্যে অনুষ্ঠিত যে কোন নির্বাচনে প্রায় ৬% এরও বেশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি; অর্থাৎ বিভিন্ন কারণে প্রায় ৭,২৯,৯৩৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভোট দিতে পারেননি। এদের মধ্যে ২২% ব্যক্তি বলেন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য তারা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন রকম সহযোগিতা পাননি; ১৮% জানান তাদের বাসস্থান থেকে ভোট কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি হ্ওয়ার কারণে এবং ১৪% তাদের পরিবারের কাছ থেকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ার কারণে ভোট দিতে পারেননি।

৩ ডিসেম্বর ২০১৫ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আজ ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) আয়োজিত এক সেমিনারে উপরোক্ত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য পৃথক ভোটকক্ষ স্থাপন, ভোটকেন্দ্রে র‍্যাম্প স্থাপন, ব্যালট পেপার ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী ব্রেইল পদ্ধতিতে রূপান্তর, নির্বাচনের দিন প্রতিবন্ধীদর জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা, ঘরে বসে ভোট প্রদান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভোটার এবং নাগরিক শিক্ষা সহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধানসমূহের সংশোধন ও সংস্কারের দাবি জানান।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)’র পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল আলীম।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোকপাত করে সিডিডি’র নির্বাহী পরিচালক  নোমান খান বলেন, সাধারণভাবে দেখলে ১০/১৫% প্রতিবন্ধী মানুষ ভোট না দিলে কী আসে যায়, কিন্তু সুযোগ না দিলে তাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। পরিবারে যখন কোন প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম হয় তখন থেকেই তাকে আলাদা করা শুরু হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাকে সকল ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রতিবন্ধী ভোটাররা নির্বাচন পূর্ব-কালীন-পরবর্তী সময়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।

সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফরমেশন অন ডিজএবিলিটি (সিএসআইডি)’র নির্বাহী পরিচালক  খন্দকার জহুরুল আলম বলেন প্রতিবন্ধী মানুষদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও ম্যান্ডেট প্রয়োজন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়া বাধ্যতামূলক।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)’র নির্বাহী কমিটির সদস্য  হারুন-অর-রশিদ। এরপর উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদের সালমা মাহবুব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জাহানারা আক্তার। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচাক ড. হাসীব মাহমুদ অনলাইনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের ভোট প্রদান এবং একই সাথে নির্বাচনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মনোনয়নের দাবি তুলে ধরেন।

সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবন্ধী এসব মানুষকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, তাঁরা যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নির্বাচনী ফলাফলে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)’র নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এডিডি ইন্টারন্যাশনাল-এর নির্বাহী পরিচালক  মোঃ শফিকুল ইসলাম উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা সভা শেষ করেন।

Print Friendly

Related Posts