যেভাবে শিরোপা জিতলেন মাশরাফি

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৫৬ রান করে বরিশাল। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে শেষ বলে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কুমিল্লা।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ সামিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন দাস। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে আহমেদ শেহজাদের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটিতে দলকে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেন ইমরুল। পর পর দুই ওভারে শেহজাদ-ইমরুলকে ফিরিয়ে বরিশালকে ম্যাচে রাখেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

রায়াদ এমরিটকে ক্যাচ দেন শেহজাদ (২৪ বলে ৩০)। অর্ধশতকে পৌঁছানোর ফিরে যান ইমরুল (৫৩)। তার ৩৭ বলের ঝড়ো ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায়।ইমরুল-শেহজাদ ব্যাটিং করার সময় মনে হচ্ছিল সহজ জয়ই পেতে যাচ্ছে কুমিল্লা। কিন্তু দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের কাজ অনেক কঠিন করে তুলে বরিশাল। দ্রুত প্রান্ত বদল করতে গিয়ে আশার জাইদি রান আউট হয়ে গেলে কুমিল্লাকে আরও চেপে ধরার সুযোগ পেয়ে যায় তারা।

ভালো লাইন-লেন্থে বল করে অলক কাপালী-ড্যারেন স্টিভেন্সদের উইকেটে বেধে রাখেন বরিশালের পেসাররা। তার সুফল পেতেও বেশি দেরি হয়নি। রান বলের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে ১৯তম ওভারে স্টিভেন্স ফিরে যান।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই মাহমুদউল্লাহর দারুণ ক্যাচে পরিণত হন অধিনায়ক মাশরাফি। পরপর দুই বলে স্টিভেন্স ও মাশরাফির বিদায়ে ম্যাচ বরিশালের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু কেভন কুপারের সেই ওভারের শেষ তিন বল থেকে ১০ রান তুলে নিয়ে দলকে জয়ের পথেই রাখেন কাপালী, যার প্রথম দিকে ব্যাটে-বলে সংযোগ পেতে সমস্যা হচ্ছিল।

সামির করা শেষ ওভারের প্রথম দুই ওভার দুই রান তুলতেই শুভাগত হোম চৌধুরীকে হারায় কুমিল্লা। সমস্ত দায়িত্ব এই সময়ে নিজের কাঁধে নিয়ে নেন কাপালী। পরপর দুই চারে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান তিনি। ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানো ম্যাচে শেষ বলে দরকার ছিল এক রান। সেই রানটি নিতে কোনো ভুল করেননি কাপালী। শেষ পর্যন্ত ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ২৮ বলের ইনিংসটি ৫টি চার সমৃদ্ধ।

এর আগে রনি তালুকদারের জায়গায় সিকুগে প্রসন্নর সঙ্গে বরিশালের ইনিংস উদ্বোধন করেন মেহেদি মারুফ। আশার জাইদিকে স্লগ সুইপ করে ছক্কা হাকালেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। পরের বলেই পুল করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। মারুফ ফিরে গেলেও দলকে এগিয়ে নেন প্রসন্ন। ১৯ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে গড়া তার ৩৩ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস শেষ হয় ড্যারেন স্টিভেন্সের বলে বোল্ড হয়ে।

বরিশালের আগের দুই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সাব্বির রহমান এবার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ১৯ বলে ৯ রান করে মাশরাফির বলে বোল্ড হয়ে যান এই তরুণ। ৬৮ রানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো বরিশাল দেড়শ’ ছাড়ায় মাহমুদউল্লাহ ও শাহরিয়ারের দৃঢ়তায়। শুরুতে দেখেশুনে খেলা এই দুই ব্যাটসম্যান শেষের দিকে মাশরাফি-নুয়াক কুলাসেকারা-হায়দারদের কাউকেই ছাড়েননি।

শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে তার সঙ্গে শাহরিয়ারের ৯.২ ওভার স্থায়ী ৮১ রানের জুটি। কুলাসেকারার বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৬ বলে খেলা তার এই অধিনায়কোচিত ইনিংসটি ৬টি চার ও একটি চারে গড়া। শাহরিয়ার অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে। তার ৩১ বলে আক্রমণাত্মক ইনিংসটি ৩টি ছক্কা ও দুটি চার সমৃদ্ধ।

মাহমুদউল্লাহ-শাহরিয়ারের শেষের এই ঝড় আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল বরিশালের। ইমরুলের ব্যাটে ভালো সূচনা পাওয়ার পরও দিক হারিয়ে চাপে পড়েছিল কুমিল্লা। সেখান থেকে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেওয়ার কৃতিত্ব কাপালীর।

অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতলেন মাশরাফি। এর মধ্যে শেষ দুবারই তিনি হারালেন মাহমুদউল্লার দলকে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts