টি. মিজান || আমরা যে ঘরে বাস করি সে ঘরখানা কতটা দূষিত এটা জানা আছে কি? যদি প্রশ্ন করা হয় ঘরের ভিতরের বাতাস বেশি দূষিত নাকি বাইরের ? তার উত্তরে এটা জেনে রাখুন যে, ঘরের ভেতরের বাতাস বাইরের বাতাসের তুলনায় ২ থেকে ৫ গুন বেশি দূষিত হয়ে থাকে। ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সী তো তাই বলছে । আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দুষনের পরিমাণ ১০০ গুন ও হয়ে থাকে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) এর মতে বিশ্বে ৩ শতাংশ রোগ আমাদের ঘরের দূষিত বাতাসের কারনে হয়ে থাকে। আমাদের ঘরের বাতাসকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিষ বা গ্যাস যেমন ফর্মালডিহাইড আমাদের বাতাস কে দূষিত করে। এছাড়াও পলেন, ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড, ডাস্ট ও বিভিন্ন ভাইরাস যা বাহির থেকে ভিতরে এসে ঘরের বাতাসকে দূষিত করে।
তাই আমাদের উচিৎ আমাদের ঘরের বাতাস আর পরিবেশ কে পরিষ্কার আর দূষণ মুক্ত রাখা। ঘরের বাতাস কে পরিষ্কার রাখার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে ঘরের ভিতর গাছ লাগানো। ঘরের ভিতরের গাছ যেমনি আপনার ঘরের সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে তুলবে তেমনি আপনার ঘরের বাতাসকে করবে পরিষ্কার ও দূষণ মুক্ত। এমনি কয়েকটি গাছের নাম ও ছবি নিচে দেয়া হল, যে গাছ গুলো অল্প আলোতে ঘরের ভেতর বেঁচে থেকে আপনার ঘরের বাতাসকে পরিষ্কার রাখবে।
এলোভেরাঃ
বহু গুনে বিশেষায়িত এলোভেরার গুনের কথা সবাই কম বেশি জানি। এই গাছের আরো একটি বড় গুন হচ্ছে এটি ঘরের ভিতরের বাতাস কে পরিষ্কার করে। আলোভেরা গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে কার্যকরীভাবে ফর্মালডিহাইড শোষণ করে বাতাসকে পরিষ্কার করে দূষণ মুক্ত রাখে।
বাঁশ পামঃ
বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড পরিশোধন করার সুপার স্টার গাছ হচ্ছে এই বাঁশ পাম গাছ। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতে বেরে ওঠা এই গাছ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। আর প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। আর বাতাস থেকে বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে।
স্নেক প্ল্যান্টঃ
এই গাছ টি সচারাচার ই অফিস কিংবা রেস্টুডেন্টে দেখে থাকেন। এই স্নেক প্লান্ট সহজে মারা যায় না। মাঝে মাঝে পানি দিলেই চলে। শুকনা স্থানে এই গাছ হয়ে থাকে। অল্প আলোতে বেঁচে থাকে এই স্নেক প্লান্ট। আর ঘরের ভিতরের বাতাসে থাকা বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন নামক বিষক্ত রাসায়নিক গ্যাস কে দূর করে।
বস্টন ফার্নঃ
বস্টন ফার্ন ঠান্ডা ভেজা আদ্র স্থানে আলোর বিপরীতে জন্মে থাকে। এই ছোট্ট গাছটির উপযুক্ত জন্ম স্থান হছে আমাদের বাথরুম। বস্টন ফার্ন আমাদের ঘরের ভিতরের বাতাসের মিশে থাকা বিষ জাইলিন ও ফর্মালডিহাইড কে দূর করে।
পিস লিলিঃ
এই গাছের তালিকায় পিস লিলি আকারে তুলনামূলক ছোট কিন্তু বাতাস পরিষ্কার করার গুরুত্ত পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে । খুব সহজেই জন্মে এই গাছ, গ্রীষ্ম কালে ফুল ও হয়। এই গাছ ছায়া স্থান ও কম ভেজা মাটিতে রাখতে হয়। পিস লিলি বাতাসে মিশে থাকে অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন দূর করে বাতাসকে রাখে দূষণ মুক্ত ।
ফিকাসঃ
ফিকাস গাছটির আকার ও গঠন অনেকেরই পছন্দ। কোন পাত্রে এই গাছ লাগানো হয়েছে তার উপর নির্ভর করে এর বৃদ্ধি। এরা সাধারণত ২ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে এই ফিকাস বাতাস পরিষ্কার বা দূষণ মুক্ত রাখতে গুরুত্তপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
দ্রাকাএনাঃ প্রায় ৪০ ধরনের দ্রাকাএনা গাছ রয়েছে। যে গুলো খুব সহজেই খুজে পাওয়া যায়। এই গাছ বাতাস থেকে বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন দূর করে। তবে এই গাছ ঘরের কুকুর বা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। তাই এই ধরনের গাছ ঘরে আনার আগে আপনার ভেবে নেয়া উচিৎ।
স্পাইডার প্লান্টঃ
সহজেই ঘরে জন্মানর জন্য উত্তম গাছ হচ্ছে এই স্পাইডার প্লান্ট। যদি আপনি আপনার ঘরে টবে গাছ লাগাতে চান তবে এই স্পাইডার প্লান্ট দিয়ে শুরু করতে পারেন। মোটামুটি উজ্জল ও সরাসরি আলোর বিপরীতে এই গাছ ভাল হয়। ফর্মালডিহাইড, জাইলিন দূষণ থেকে বাতাস কে রক্ষা করে এই স্পাইডার প্লান্ট।
গার্ডেন মুংঃ
নাসা ‘র গবেষণায় এমনটাই প্রকাশ পেয়েছে য়ে গার্ডেন মুং বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা এইটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি সল্প খরচেই ঘরের টাবে লাগানো যায়। এছারাও ফুল ফোটার পর বাহিরেও লাগানো যায়।
এই গাছ গুলো ঘরে থাকলে আপনার ঘরের বাতাসকে রাখবে পরিষ্কার ও দূষণ মুক্ত। এছারাও আপনার সাথে প্রকৃতির একটি বন্ধন ও তৈরি করবে এই গাছ গুলো। শহুরে জীবনের ইট পাথরের ঘরে গাছ লাগান ভাল রাখুন ঘরের বাতাস সুস্থ থাকুন ।
নিচের ভিডিওটি থেকে দেখে নিন কিভাবে গাছ আপনার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আর কোন কোন বিষাক্ত উপাদান বাতাস থেকে দূর করে।
Video link: https://youtu.
http://Video%20link:%20https://youtu.be/F8mPPL6gWbo