বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পণ্য পরিবহনের আড়ালে অবাধে দেশি-বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর মাধ্যমে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। কুরিয়ার সার্ভিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে গড়ে উঠেছে ইয়াবা পাচারের বিশাল সিন্ডিকেট।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একাধিকবার উচ্চপর্যায়ে রিপোর্ট পাঠানো হলেও সক্রিয় রয়েছে জড়িতরা। ৫টি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার করা হচ্ছে বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এসএ পরিবহনের শান্তিনগর কুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টার থেকে দুটি হারমোনিয়াম বুঝে নেয়ার পর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দল ওই হারমোনিয়ামের ভেতর থেকে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলস্থ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে ইয়াবা আনার সময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দল ৫ হাজার ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেফতার করে। খাবার পরিবেশনের বাটির মাধ্যমে ওই ইয়াবা পাচার করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক ও অবৈধ পণ্য পাচারের সাথে শুধু দেশীয় কুরিয়ার সার্ভিস নয়, বিদেশি কুরিয়ারের মাধ্যমেও আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সদস্যরা মাদক পাচার করছে। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে কুরিয়ারে আসা সাড়ে ৭শ’ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাতেন খাঁর মোড়ে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় থেকে পুলিশ বিদেশি পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে। ফলের কার্টনে ভরে এগুলো পাচারের চেষ্টা চলছিল।
চলতি বছরের ১ ফেব্রয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নারায়ণগঞ্জে কুরিয়ার সার্ভিসে আনা ফ্রিজ থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ এ ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের কাছে গোপন সংবাদ ছিল যে কক্সবাজার থেকে এসএ পরিবহনের শান্তিনগর কুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টারে পার্সেলের মাধ্যমে দুটি হারমোনিয়াম পাঠানো হয়েছে। হারমোনিয়ামে ইয়াবা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কাউন্টার থেকে হারমোনিয়াম দুটি গ্রহণ করে নিয়ে যাওয়া হবে কাকরাইলে একটি প্রকাশনা সংস্থার কার্যালয়ে। পরে সেখানে দু’জন ব্যক্তি এসে হারমোনিয়াম দুটি নিয়ে যাবেন। সূত্র জানায়, হেলাল নামে এক ব্যক্তি হারমোনিয়াম দুটি পাঠিয়েছেন। প্রাপক ছিলেন জসিম নামের এক ব্যক্তি। চক্রটিকে ধরার জন্য গত বুধবার ভোর থেকে অধিদপ্তরের ঢাকা গোয়েন্দা অঞ্চলের তত্তবধায়ক ফজলুর রহমান খান, পরিদর্শক রুকনুজ্জামানসহ সাত সদস্যের একটি দল এসএ পরিবহনের ওই কাউন্টারে অবস্থান নেয়। দুপুরে একব্যক্তি নিজেকে জসিম পরিচয় দিয়ে হারমোনিয়াম দুটি সংগ্রহ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আটক করে হারমোনিয়াম দুটি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিতে প্রতিটি হারমোনিয়ামে দুটি করে প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ১০ হাজার করে ইয়াবা বড়ি পাওয়া যায়।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জসিম পরিচয়ে হারমোনিয়াম নিতে আসা ব্যক্তির নাম ইসহাক হোসেন। তিনি কাকরাইলে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল হারমোনিয়াম দুটি নিয়ে গিয়ে শাহীন ও জসিম নামে দু’জনের কাছে হস্তান্তর করা। পরে ইসহাকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শান্তিনগর থেকে শাহীন ও জসিমকে আটক করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবার প্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতীতের চেয়ে এখন বেশি তৎপর। ২০১৬ সালে এক কোটির অধিক পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও শুধু চলতি বছরের ৮ মাসেই প্রায় তিন কোটি পিস এরও বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ড দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে এই ইয়াবার চালান। এর পরেও ঠেকানো যাচ্ছে না ভয়ঙ্কর এই মাদকের অনুপ্রবেশ।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ১৫টি স্থানে ৩৭টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। যেখান থেকে সাগর ও সড়কপথে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া, সাবরাং, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাইট্যংপাড়া, জলিলেরদিয়া, লেদা, আলীখালী, হৃলাসহ অন্তত ১১টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব ইয়াবা তৈরি ও পাচারে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গডফাদারও রয়েছে। যারা সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব কিংবা পুলিশে চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার করে আসছে।