ঢামেক থেকে শিশু চুরি, ১৭ ঘন্টা পর নারায়ণগঞ্জে উদ্ধার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ বাবার বিছানার পাশে ঘুমিয়ে ছিল তিন মাসের ফুটফুটে শিশু জিম। সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন মা সুমাইয়া আক্তার মাজেদা। সোমবার মধ্যরাতে হাসপাতালের নতুন ভবনের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে থেকে শিশুটি চুরি হয়ে যায়।

এর ১৭ ঘন্টা পর মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে উদ্ধার করে। জিমের বাবার পাশের বিছানার একজন রোগীর স্বজন শিশুটিকে চুরি করেছিল বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা।

মধ্যরাতে আদরের ধন হারিয়ে শিশুটির অসুস্থ বাবা জুয়েল হোসেন আর মা সুমাইয়ার কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তাদের বিলাপে অন্য রোগীর স্বজনরাও শিশুটিকে আশপাশে খোঁজেন। অবশেষে উদ্ধারের খবরে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

জিমের বাবা পেশায় রিকশা চালক জুয়েল হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যা নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর তিনি হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুমাইয়া কোলের সন্তানকে নিয়ে স্বামী সেবায় হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন। চার বোনের মধ্যে জিম সবার ছোট।

বিলাপ করে সুমাইয়া আক্তার বলেন, রাতে তিনি জিমকে নিয়ে স্বামীর বিছানার অদূরে অন্য একটি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন। রাত একটার দিকে ঘুম ভাঙলে দেখেন মেয়ে নেই। এরপর আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওকে পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে তিনি ঘটনাটি জানান।

সুমাইয়া জানান, তাদের পাশে ৪১ নম্বর বিছানায় সিদ্দিক নামের এক রোগী ছিলেন। ওই রোগীর জুয়েল নামের একজন স্বজন কয়েকদিন আগে তাকে বলেছিলেন, তার কোনো সন্তান নেই। জিমকে সে লালন-পালন করতে নিয়ে যেতে চায়। নিজের মেয়েকে তিনি দিতে অস্বীকার করলে জুয়েল কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলেছিল, ‘আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে যাবো, না দিলে চুরি করে নিয়ে যাবো।’

মেয়েকে উদ্ধারের খবরে এই মা বলেন, সেই জুয়েলই তার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গেছে।

৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন মোহাম্মদ আনিস জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি বাইরে থেকে ওই ওয়ার্ডে যান। তখন বিছানায় জিমের বাবা ও আরেক বোনকে ঘুমাতে দেখেন। তবে শিশুটির মা ও তার খালাতো ভাই রাফসান ফরাজীকে ওয়ার্ডের বাইরে লিফটের পাশে একটি অতিরিক্ত বিছানায় ঘুমাতে দেখেন। সেখানে শিশুটি ছিল না। তখন তিনি বিষয়টি সুমাইয়াকে ডেকে জানান। এরপরই শিশুটির খোঁজ পড়ে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ঘটনা জানার পর শিশুটিকে উদ্ধারের সব ধরনের চেষ্টা শুরু করেন। বিষয়টি শাহবাগ থানাকেও জানানো হয়। এরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম জানান, শিশু নিখোঁজের বিষয়টি অবগত হয়ে শাহবাগ থানার পুলিশকে জানানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, শিশু নিখোঁজের খবর পেয়েই তাকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটি বিশেষ টিম করে অভিযান শুরু করেন। পরিবারের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এর আগে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে খাদিজা আক্তার নামে সাড়ে তিন মাসের এক শিশু চুরি হয়। ওই বছরের ৫ মার্চ দেড় বছরের শিশু আয়েশাকে চুরি করার সময় পপি আক্তার নামের এক নারীকে আটক করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ভোরে নবজাতক ওয়ার্ড থেকে এক নারী যমজ দুই ছেলে সন্তানের একজনকে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে অবশ্য র‌্যাব ওই নারীকে আটক করে শিশুটিকে উদ্ধার করে। ২০১২ সালের ১৯ মার্চ একই হাসপাতাল চার বছরের এক শিশুকে চুরি করার সময় নাদিম নামের এক যুবক হাতেনাতে ধরা পড়ে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts