বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ১০ লাখ টাকার ভুয়া কাবিন নামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিতে না পেরে স্ত্রী ও তার পাঁচ সহযোগী মিলে চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পিকে লিঙ্গ কর্তন করে খুন করা হয়।
খুনের পর স্ত্রীর নির্দেশে সহযোগীরা নৃশংসভাবে এই আইনজীবীর পুরুষাঙ্গও কেটে নেয়। হত্যায় জড়িত স্ত্রীসহ তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর খুনের পুরো রহস্য উন্মোচন করে চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার রাতে চট্টগ্রামের পিবিআই দপ্তরে এই খুনের রহস্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন পিবিআইয়ের চট্টগ্রামের পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা। এর আগে সোমবার সকালে ও বিকেলে পৃথক অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে বাপ্পির ৬ খুনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, গ্রেপ্তারকৃত রাশেদা বেগম ও তার প্রাক্তন স্বামী মাদক মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী ছিলেন ওমর ফারুক বাপ্পী। মাদক মামলায় এই দুইজনই আসামি ছিলেন। এই মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে রাশেদার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আইনজীবী বাপ্পীর। পরবর্তীতে রাশেদাকে নগরীর পাথরঘাটা কাজী অফিসে বিয়ে করেন বাপ্পী। সেই সময় কাবিনে টাকার পরিমাণ লেখা হয়েছিল দুই লাখ টাকা। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে রাশেদাকে তালাক দেন বাপ্পী। কিন্তু রাশেদার দাবি বাপ্পীর তালাকনামা ভুয়া ছিল।
সম্প্রতি বাপ্পীকে বিয়ে করানোর জন্য তার পরিবার মেয়ে খুঁজছিল। বিষয়টি শুনে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে রাশেদা। বাপ্পীকে কৌশলে ডেকে এনে দশ লাখ টাকার একটি কাবিননামা করার পরিকল্পনা করেন রাশেদা (২৭) । পরিকল্পনা অনুযায়ী গত শুক্রবার বাপ্পীকে নগরীর বাকলিয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় দাওয়াতের কথা বলে ডেকে আনেন রাশেদা। ঠিক করে রাখা হয়েছিল একজন কাজীকেও। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে কাবিননামা করতে না পেরে বাপ্পীকে খুন করেন রাশেদা ও তার সহযোগীরা।
বাপ্পী খুনের ঘটনায় রাশেদা বেগমসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকি পাঁচজন হলো- হুমায়ুন রশীদ (২৮), আল আমিন (২৮), মো. পারভেজ প্রকাশ আলী (২৪), আকবর হোসেন প্রকাশ রুবেল (২৩) ও জাকির হোসেন মোল্লা (৩৫)।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদা বলেন, ‘আট বছরের অধিক সময় ধরে হুমায়ুনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি তাকে বলেছি, বাপ্পীর জন্য তো মেয়ে খুঁজছে, আমি এখন কি করব? তখন হুমায়ুন আমাকে পরামর্শ দিয়েছে নতুন করে একটি কাবিননামা করে তাতে টাকা বাড়িয়ে নিতে পারলে লাভ হবে। এরপরই আমরা বাপ্পীকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করি।’
খুনের রহস্য জানিয়ে পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপার মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বাপ্পী গোপনে বিয়ে করে রাশেদাকে স্বীকৃতি দেননি। তিনি রাশেদার সঙ্গে সংসার করতে চাননি। অন্যদিকে রাশেদা তাকে ছাড়তে চাননি। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করেছেন। বাপ্পী ভুয়া তালাকনামা আদালতে দাখিল করে সেই মামলায় জামিন নেন। হুমায়ুনকে ভাই সাজিয়ে রাশেদা ২০ নভেম্বর বাকলিয়ার কেবি আমান আলী রোডের বাসাটি ভাড়া নেন। ওই বাসায় ২৪ নভেম্বর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাপ্পী এবং রাশেদা ছিলেন। এ সময় হুমায়ুন অন্য চারজনকে নিয়ে ওই বাসায় যান। বাসায় ঢুকে রাশেদার বুকে ছুরি ধরার নাটক করেন। তখন বাপ্পী চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ধরে হাত–পা, মুখে টেপ লাগিয়ে দেন। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বাপ্পীর আর জ্ঞান ফেরেনি। পরে রাশেদার নির্দেশে বাপ্পীর পুরুষাঙ্গ কেটে দেন তারা।
শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার ভোর রাতের মধ্যে হত্যা করে সবাই বেরিয়ে যান। হুমায়ুনকে নিয়ে রাশেদা বহদ্দারহাটে বোনের বাসায় গিয়ে এক রাত থাকেন। পরদিন দুজনে কুমিল্লার মিয়াবাজার গিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখান থেকে রাত পৌনে ২টায় সৌদিয়া বাসে করে ঢাকায় রওয়ানা দেন। ভোরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছান। সেখান থেকে টঙ্গীতে যান। টঙ্গীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা না পেয়ে হুমায়ুন ও রাশেদা আবারো কুমিল্লায় মিয়াবাজারে ফিরে আসেন।
রাশেদা এবং হুমায়ুন ছাড়া বাকি চারজন সিইপিজেডে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বাপ্পীকে ভয় দেখানোর জন্য তাদের হুমায়ুন নিয়ে গিয়েছিলেন। রাশেদা তাদের চিনতেন না বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈন। আটক ছয়জনকে আজ মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তা মঈন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে নগরীর চকবাজার থানার কেবি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে চট্টগ্রাম আদালতের তরুণ আইনজীবী বাপ্পীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার হাত–পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং পুরুষাঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে বাপ্পী চট্টগ্রাম বারে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি বান্দরবানের আলিকদম উপজেলার ডা. আলী আহমেদ এবং মনোয়ারা বেগমের ছেলে। এই ঘটনায় বাপ্পীর বাবা বাদী হয়ে নগরীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।