বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বান্দরবানের দুর্গম এলাকাগুলো এখন পপির আবাদভূমি। সম্প্রতি যৌথবাহিনীর অভিযানে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেন একরের পর একর পপিক্ষেতে ছেয়ে আছে দুর্গম বান্দরবান ।
দফায় দফায় অভিযানে অন্তত ২৫টি পপিক্ষেত ধ্বংস করেছে এই যৌথবাহিনী। রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় ছিল এই ক্ষেতগুলো। জানা যায়, রুমা’র মতো এই জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলার দুর্গম এলাকায়ও রয়েছে অনেক পপিক্ষেত।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে রাত পর্যন্ত রুমার সাইকট পাড়া ও খুলেন খুমি পাড়ার পাশে রুমা জোন (২৭ ইবি) এর ক্যাপ্টেন মোঃ আশিকুর রহমান এর নেতৃত্বে স্পেশাল যৌথবাহিনী ১০ একর জমিতে আবাদকৃত ১২ টি পপি ক্ষেত ধ্বংস করে। এসময় একটি জুম ঘরে থাকা বিপুল পরিমান পপির বীজ ধ্বংস করে। অবশ্য আগেই টের পেয়ে পালিয়ে যায় পপি চাষিরা। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি রুমা’র কেওক্রাডং পাহাড় এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৪টি পপি ক্ষেত ও ৬০ কেজি পপির রস ধ্বংস করে র্যাব-৭। গত ২৮ জানুয়ারি ম্রোক্ষিয়াং ঝিড়ি এলাকায় ৫ একর পপি ক্ষেত ধ্বংস করে যৌথবাহিনী। ৩১ জানুয়ারি তংগ্রী পাড়া ও শৈরাতাং পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৩টি পপিক্ষেতও ধ্বংস করে যৌথবাহিনী
রুমা জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ গোলাম আকবর পিএসসি, বলেন, ‘পপি একটি বিষাক্ত নেশা জাতীয় গাছ, যা থেকে আফিম ও হিরোইন তৈরি করা হয়। তাই রুমার যেখানেই চাষ করা হোক না কেনো ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
নেশার উপকরণ তৈরি হয় বলে পপি চাষ নিষিদ্ধ। সুন্দর পপি ফুলের পাশাপাশি এ গাছ থেকে যেমন ওষুধ তৈরির নানা উপাদান পাওয়া যায়, তেমনি এ গাছের ফল থেকেই তৈরি হয় সর্বনাশা মাদক আফিম। পপি গাছের কাঁচা ফলের খোসা কাটলে যে সাদা রস পাওয়া যায় তা ২৪ ঘণ্টা রোদে শুকালে পাওয়া যায় আফিম।
স্থানীয়দের সূত্র মতে, রুমা উপজেলার কোলাদি মৌজায় নাইতং পাড়ার ক্যংম্রো ঝিরিতে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি স্থানে ১০ শতক, ৫ শতক করে পপি চাষ করা হয়েছে। আলীকদম উপজেলার পোয়ামুহুরী ও থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মুরুক্ষ্যং ঝিরি এলাকায় স্থানীয় পাহাড়িদের সহযোগিতায় নিষিদ্ধ পপি (আফিম) চাষ করছে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) ও আরকান আর্মি (এএ)। পপির রস সংগ্রহ করে তারা মিয়ানমারে পাচার করে। মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকারী সংগঠনগুলোর অর্থের বড় উৎস এই পপি চাষ।
জানা যায়, অভিযানে রুমায় একের পর এক পপিক্ষেত খুঁজে পাওয়ায় খোদ স্থানীয়রাই বিস্ময় প্রকাশ করেছে। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শামসুল আলম বলেন, আমরা মাসিক মিটিং -এ পপি চাষ না করার জন্য বলি, জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশনা দেওয়া আছে, তারপরও যারা পপি চাষ করছেন তারা অবশ্যেই আইনের আওতায় আসবে।