বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশের প্রথম টেলিকম অপারেটর হিসেবে ভয়েস ওভার এলটিই (ভোল্টি) সেবা চালু করল শীর্ষ ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সেবাটির উদ্বোধন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে গ্রাহকরা উদ্ভাবনী এই সেবাটি উপভোগ করতে পারবেন। উদ্বোধনের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৫ হাজার বেশি সাইট ভোল্টি সেবার জন্য সক্রিয় করা হয়। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী সেবাটি বিস্তৃত করা হবে।
ভোল্টি হচ্ছে আইপি-ভিত্তিক ভয়েস কল প্রযুক্তি; এই প্রযুক্তিটির মূল লক্ষ্য এইচডি (হাইডেফিনেশন) মানের ভয়েস সেবা নিশ্চিত করা। এলটিই ডাটা নেটওয়ার্কে ভয়েসকে আলাদা অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে বিবেচনা করে ভোল্টি। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ২ থেকে ৩ সেকেন্ডের মধ্যে কল সংযোগ করতে পারবেন যা প্রথাগত টুজি বা থ্রিজি নেটওয়ার্কের চেয়ে ৪০-৫০% দ্রæততর।
ভোল্টির সুবিধা সম্পর্কে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ’র একটি গবেষণা অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো ইত্যাদি ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সেবার মাধ্যমে কল করার চেয়ে ভোল্টি সেবার আওতায় কল করলে গ্রাহকরা তাদের হ্যান্ডসেটে ৪০ শতাংশ বেশি বেটারি লাইফ পাবেন।
ভোল্টি সেবা গ্রহণের জন্য গ্রাহকদের কোন বাড়তি খরচ করতে হবেনা। সেবাটি সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে কল প্রেরক ও গ্রহীতা উভয়ের ভোল্টি সেবা ব্যবহার উপযোগী ফোরজি হ্যান্ডসেট এবং ভোল্টি অ্যাক্টিভেটেড ফোরজি সিম কার্ড লাগবে। এছাড়া উভয়কে ভোল্টি কভারেজ এলাকার মধ্যে থাকতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ নূর-উর-রহমান এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, এমপি বলেন, “ ভলটিই সেবা চালুর জন্য রবিকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি ভলটিই-র মাধ্যমে আমরা আরও উন্নত মানের টেলিযোগাযোগ সেবা পাবো। ”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ বাংলাদেশে ৫জির পরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে রবি সবার আগে এগিয়ে এসেছিল। ভলটিই চালুর ক্ষেত্রে রবি একইভাবে এগিয়ে এলো। যেহেতু রবির মাধ্যমে বাংলাদেশ ভলটিই-র যুগে প্রবেশ করেছে, তাতে অন্য অপারেটরদের কাছেও ভলটিইর সেবা চালু করার অনুরোধ থাকল। ”
রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশের প্রথম অপারেটর হিসেবে ভোল্টি সেবা চালু করতে পেরে আমরা গর্বিত। ভোল্টি প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে একমাত্র রবিই টুজি, থ্রিজি’র পাশাপাশি ফোরজি নেটওয়ার্কেও ভয়েস সেবা প্রদান করছে। এর মানে ভোল্টি শুধু এইচডি মানের ভয়েস সেবাই নিশিচত করবেনা, ভোল্টির মাধ্যমে বাড়তি সক্ষমতা নিশ্চিত হওয়ায় রবি’র নেটওয়ার্কে ভয়েস কলের মান বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উদ্ভাবনী এই সেবাটি উপভোগ করতে গ্রাহকদের কোন বাড়তি খরচ করতে হবেনা।”
ভোল্টিকে আসল গেম চেঞ্জার হিসেবে উল্লেখ করে রবি সিইও বলেন, “প্রায় দুই দশক আগে টেলিযোগাযোগ সেবা শুরু হওয়া সময় প্রথাগতভাবে টুজি বা থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভয়েস কল সেবা দেয়া হতো। থ্রিজি প্রযুুক্তি ভয়েস কলের মান বৃদ্ধিতে তেমন কোন প্রভাব রাখেনি। ভোল্টি আইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সত্যিকার অর্থে ভয়েস কলের মানে আমুল পরিবর্তন আনবে যা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
রবি’র চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আগ্রহী রবি বা এয়ারটেল গ্রাহকরা *৮৬৫৮৩# ডায়াল করে ভোল্টি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। কোডটি ডায়াল করার পর রবি বা এয়ারটেলের কর্মকর্তাবৃন্দ নির্দিষ্ট গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে জানাবেন ভোল্টি সেবা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিকগুলো তার আছে কিনা এবং থাকলে তাকে কী কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। অথবা সেবাটি কীভাবে গ্রহণ করতে হবে তা জানার জন্য রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহকরা কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার ১২১-এ কল করতে পারেন। গ্রাহকরা রবি ও এয়ারটেলের নির্বাচিত
ওয়াক-ইন-সেন্টারে গিয়েও সেবাটির অভিজ্ঞতা নেয়া এবং বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবেন।
গত বছরের ১৬ জানুয়ারি রবি দেশে প্রথমবারের মতো তাদের ৪.৫জি নেটওয়ার্কে সফলভাবে ভোল্টি প্রযুক্তির পরীক্ষা চালায়। ভোল্টি চালুর মাধ্যমে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল টেলিযোগাযোগ শিল্পে শীর্ষ উদ্ভাবনী কোম্পানি হিসেবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করল রবি।