বসন্ত ও ভালোবাসায় একাকার দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে। কুহক লেখনি ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে, লিখিছে প্রণয়-কাহিনী বিবিধ বরন-ছটাতে’।

ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ অমীয় বাণীটি আজ সত্যিই তরুণ মনে দোলা দিয়েছে। দুয়ারে আগুনরাঙা বসন্ত দেখে সবার মন যেন ছুটে যেতে চাইছে অরণ্যে। যেখানে কাননে কাননে উৎসবের রঙের কোলাহলে মেতে উঠেছে চারদিক।

গাছের কঁচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দক্ষিণা বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু কলতানে আজ তাই ঘর ছেড়েছে তারুণ্য। তাইতো মধুময় যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্তে আজ মেতে উঠেছে রাজধানী।

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একদিন আগে-পরে এতো বছর উৎসবে ভাসতো নগরবাসী। তবে প্রিয় দিবস দুটি একই দিনে হওয়ায় দ্বিগুন প্রাণচাঞ্চল‌্যে নগরবাসী ঢাকাকে যেন আনন্দ নগরী বানিয়ে ফেলেছেন শুক্রবার। এ দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তা যেন উৎসবকে আরো উপভোগ‌্য করে তুলেছে।

এমনিতেই পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে আগে থেকেই নগরবাসীর, বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও জুটিদের থাকে নানা পরিকল্পনা। পোশাক ও সাজ-গোজের পাশাপাশি তারা খোঁজে একটু নির্জন-নিরিবিলি জায়গা, যেখানে গিয়ে তারা নিজেদের আলাদা একটু অন‌্যরকম সময় দেয়ার সুযোগ পাবে।

জনবহুল এ রাজধানীতে এ দিন কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন রমনা, হাতিরঝিল বা তিনশ ফিটের মত জায়গা। প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি ছাড়াও যারা পরিবার নিয়ে এ দিনটি কাটাতে চেয়েছেন, তারা গেছেন জাতীয় জাদুঘর, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।

স্বাভাবিকভাবেই দিনটি বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রণ্থমেলার সময় হওয়ায় বাংলা একাডেমির আশপাশের এলাকাও ছিল অনেকের পছন্দের তালিকায়। ঘোরাঘুরির পাশাপাশি প্রিয়জনকে প্রিয় লেখকের বই উপহার দেয়ার আনন্দটাও পেয়েছেন তারা। বিকেল তিনটায় বইমেলার দ্বার খুললেও আজ এই বিশেষ দিনে খুলেছে সকাল ১০টায়।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, জোড়ায় জোড়ায় বসে উচ্ছ্বসিত ‍ তরুণ-তরুণীরা যেন প্রকৃতির মাঝে পুরো পার্কের জমিন জুড়ে ভালোবাসার আল্পনা এঁকেছেন। গল্প করেছেন হাসিমুখে, মিষ্টি খুনসুটি চলেছে সময়ে সময়ে আর স্মৃতি ধরে রাখতে সেলফিতে মেতে রয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লোকচক্ষুর আড়ালের সুযোগ নিয়ে প্রিয় মানুষটিকে আদর দিয়ে দিচ্ছেন।

কথা হয় এক যুগলের সঙ্গে, তারা দুইজনই্ একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ছেলেটি লাল পাঞ্জাবি পরা আর মেয়েটি লাল শাড়িতে সুসজ্জিত। মাথায় ফুলের বেড়ি, খোঁপায় আর গলায় গাঁধা ফুলের মালা। মেয়েটি জানান, ফুলের বেড়ি আর মালা তার সঙ্গে থাকা ভালোবাসার মানুষটির দেয়া উপহার।

তারা বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ভাবছি, দিনটি কীভাবে স্মরণীয় করে রাখা যায়। পরে দুই জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, সকালে পার্কে ঘুরবো। দুপুরে লাঞ্চ করে বই মেলায় যাবো, সেখান থেকে হাতিরঝিলে।’

সকালে রমনা পার্ক বা অন‌্যান‌্য বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়ার মত ভিড় দেখা যায়নি। তবে বেলা বাড়তেই ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। রাজধানী জুড়েই আজ সাজ সাজ রব। পোশাক আর সাজগোজই যেন বলে দিচ্ছে, আজ আনন্দ-সুখের বিশেষ জোড়া দিন।

দুপুরের পরে হাতিরঝিলে গিয়ে দেখা যায়, যেন মেলা বসেছে, ভালোবাসার মেলা। কথা হলে স্বর্ণা নামের একজনের সঙ্গে, তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘একটি দিবসকে কেন্দ্র করে বলতে চাইনা, তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে কেন্দ্র করে ভালোবাসার মধ‌্যে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই। আর বলতে চাই, অনেক ভালোবাসি তোমায়। আমি আছি তোমার সাথে সবসময়।’ কথাগুলো শুনে যেন খুশি ধরে রাখতে পারছিলেন না ভালোবাসা দিবসে তার ভালোবাসার মানুষটি।

এদিকে বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও রয়েছে অনেকের আনাগোনো। বসে আছে জোড়ায় জোড়ায়। যদিও এটি বিনোদন কেন্দ্র না, তারপরও এখানে লেগেছে ভালোবাসার রং। তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি আবার অনেকেই এসেছেন পরিবারের সদস‌্যদের নিয়ে।

এখানে টাকার বিনিময়ে শিশুদের ঘোড়ায় চড়ায় সুযোগ রয়েছে। দুই ঘোড়ার পিঠের চড়ে শিশুরা মেতেছে আনন্দে।

গেট থেকে ঢুকতেই দেখা গেছে একটু ভিন্ন দৃশ‌্য। আজ রাজধানীর কিছুদূর পরপর দেখা গেছে মৌসুমী ফুল ব‌্যবসায়ীর অস্থায়ী দোকান। তবে সেসব দোকানের বিক্রেতা ছিলেন ছেলেরা। আর এখানে দেখে গেছে, ফুল বিক্রি করছেন তিন তরুণী, অন‌্যদের ভালবাসার দিনটির পূর্ণতা দিয়েই যেন তাদের আনন্দ।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts