বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে চলমান বিশৃঙ্খলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ইতিপূর্বে রাঙ্গনিয়ার পোমরায় শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২, মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও ঠিকাদারি বিশৃঙ্খলার বিষয়েও দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি সরকারসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বুধবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বোয়ালখালির ভান্ডালজড়ি প্রকল্পের জন্য কোরিয়ার তাইয়ুং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও তারা কাজটি সম্পাদন না করে উপ-ঠিকাদার নিয়োগ দেয়, উপ-ঠিকাদার আবার অন্যকে কাজটি সম্পাদনের দায়িত্বপ্রদান করে চলেছে। কোরিয়ান ঠিকাদার শেষ পর্যন্ত কমিশন এজেন্টস ও কাজ বন্টকের ভূমিকায় অবর্তীন হয়েছে। ফলে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ কমিশনের ভাগভাটোয়ারায় চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাজের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রতিনিয়ত দাঙ্গা-হাঙ্গামা মারামারি লেগে আছে। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। জনমনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এসব নিয়ে প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান।
চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পগুলির মান যাচাইয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষন বিভাগের কঠোর ভূমিকা রাখা জরুরি। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ঠিকাদারদের হাতবদলসহ মাঠ পর্যায়ে অনিয়মগুলি খতিয়ে দেখার আহবান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতারা অভিযোগ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় পানি সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১১ বছর পার করলেও প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে পারেননি। অধিকন্তু অনিয়ম, প্রকল্পে বারবার বাজেট সংশোধন, অদক্ষ প্রশাসন, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও গ্রাহক স্বার্থকে উপেক্ষা করার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর শুধু চাহিদা পুরণে ব্যর্থ নয়, যন্ত্রণারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকাদাররা প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বন্টকের ভুমিকায় অবর্তীন হবার কারণে কাজের জবাবদিহিতা যেভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে, তেমিন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না। এতে প্রকল্পের সুফল জনগণের কাছে না গিয়ে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি ঠিকাদারদের হাতেই বন্দি হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত নানা অনিয়ম খতিয়ে দেখার দাবিতে দেয়া বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিযুক্ত হলেও তারা নিজেরা কাজ না করে বন্টন করে দিচ্ছেন। আর হাত বদল হলেই কাজের মান কমতে থাকে। আবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে উন্নয়ন প্রকল্পে বাজেট বার বার পূণঃ সংশোধন করে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুন্টণ হলেও কেউ এ পর্যন্ত সুনিদিষ্ট ব্যাখা চায়নি। তদুপরি উন্নয়ন প্রকল্পের নজরদারিতে ওয়াসা পরিচালনায় সরকার মনোনীত বোর্ড সদস্যদেরকেও সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ইচ্ছানুসারে উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছু করেননি। পানি সমস্যা যে তিমিরে ছিলো সেখানেই আছে।
ক্যাবের দাবি, ওয়াসা চট্টগ্রামে বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের দাবি করে আসলেও গ্রাহকরা সে হিসেবে পানি পাচ্ছে না। সংস্থাটির হিসাব বিভাগ থেকে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, উৎপাদিত পানির ৫০ ভাগের বেশি অপচয় হয়। এ বিষয়টিরও তদন্ত হওয়া জরুরি।