শাহ মতিন টিপু
আমি শেখ হাসিনা-/আমাকে তোমরা ভয় দেখিও না/ আমি এই মৃত্তিকার ভেতরে প্রবিষ্ট হয়ে আছি মৃত্তিকার প্রথম সন্তান/এদেশের তৃণমূল মানুষের গর্ভে আমি জন্ম নিই নিরবধিকাল/ আমাকে ধ্বংস করে, এরকম কৌরবের জন্ম হয়নি বাংলার মাটিতে।/আমি সেই সাহসের সন্তান, নক্ষত্রের বুক থেকে অগ্নি সঞ্চয় করে/জন্ম নেয়া পিতার সাহস নিয়ে মুহূর্ত মুহূর্ত শুধু মহাশূন্য উথাল-পাথাল করে/বিদ্ধ করি অসুরের উদ্ধত বুকের পাঁজর।/আমাকে ধ্বংস করে, এরকম দুর্বৃত্তের জন্ম হয়নি পৃথিবীতে আজো।
এই কবিতাংশ কবি অসীম সাহার ‘শেখ হাসিনার জবানবন্দি’ কবিতার। অসীম সাহার বেশির ভাগ কবিতাই সমকাল ও সাহসী উচ্চারণে সমৃদ্ধ। তবে মানবতার পক্ষেই তার কবিতার পক্ষপাত।
তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে লিখেছেন- ‘যদি রাজদণ্ড দাও—আমি মাথা পেতে নেবো।/ক্ষমার অযোগ্য যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, / আর সেই ভুলের জন্যে যদি বদলে যায় ভৌগোলিক সীমা, /যদি আত্মজের নিক্ষিপ্ত তীর শূন্যতায় উড়ে গিয়ে/শক্তিশেল হয়ে বেঁধে তোমার শরীরে—/তুমি তবে কোন্ দণ্ড দেবে? /যদি রাজদণ্ড দাও—আমি মাথা পেতে নেবো। /পিতা, একদিন তুমি ছিলে স্বপ্নের ভেতরে, /তোমার স্বপ্নের মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম/আমার অখণ্ড নীলাকাশ;কিন্তু তুমি তো জানো পিতা, স্বচ্ছ সুন্দর সেই নীলাকাশকে/ঢেকে দেয় যে-শ্রাবণের ঘন কালো মেঘ/আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকা যে-বজ্রের হুংকার/উদ্ধত আক্রোশে গর্জে উঠে পৃথিবীকে ভস্মীভূত করে,/আমি সেই গর্জনের অগ্নি থেকে জেগে ওঠা বিভ্রান্ত বালক/কিছুতেই বুঝতে পারিনি/আমি তোমাকে আঘাত করে/আমারই অস্তিত্বের মূলে আঘাত করেছি। (যদি রাজদণ্ড দাও)
কবি অসীম সাহার ৭২তম জন্মদিন আজ। তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় তার মামার বাড়িতে। পিতৃপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা গ্রাম। পিতার চাকরি-সূত্রে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস। লেখাপড়াও মাদারীপুরে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লেখালেখি জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’।
তার বইয়ের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর কয়েকটি হচ্ছে : কালো পালকের নিচে, পুনরুদ্ধার, উদ্বাস্তু, মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি, অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব, মুহূর্তের কবিতা, Refujee and the festval of death in darkness, সৌর-রামায়ণ, অক্টাভিও পাস ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ), কবর খুঁড়ছে ইমাম, প্রেমপদাবলি, পুরনো দিনের ঘাসফুল, প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা, অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও, উদাসীন দিন (উপন্যাস), শ্মশানঘাটের মাটি (গল্প), কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে, শেয়ালের ডিগবাজি, হেনরি ডিরোজিও ইত্যাদি ।
কবিতায় সামগ্রিক অবদানের জন্য ষাটের দশকের এ কবি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
সূত্র: রাইজিংবিডি
ছবি: কবির সঙ্গে লেখক