বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দুই অঙ্কের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে ২০১৯ সালে দেশের শীর্ষ ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী কোম্পানি রবি’র কর পরবর্তী মুনাফার (পিএটি) পরিমাণ ১৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল জুড়ে ডেটা খাতে রাজস্ব বৃদ্ধির হার ছিল অভাবনীয়- ২৮ শতাংশ। সেই অগ্রগতি কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালে রবি’র মোট রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
যদিও কর্পোরেট করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫%, ২০১৯ সালে রবি’র কার্যকর করের পরিমাণ ছিল ৯০%। ন্যূনতম করহার দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ, সিম করের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা, স্মার্টফোনের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ, মোবাইল সেবার সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করায় কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অন্যদিকে ডেটার জন্য কোন ন্যূনতম মূল্য না থাকায় চাপের মুখে পড়েছে কোম্পানি। ডেটা ব্যবহারের মাত্রা লক্ষ্যণীয় পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও ডেটার জন্য ন্যূনতম মূল্য না থাকায় এই শিল্পে আত্মঘাতী প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে ক্রমবর্ধমান ওটিটি (ওভার দি টপ) সেবার কারণে যে লোকসান হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছেনা। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করার কারণেই পর্বতসম করের বোঝা সত্ত্বেও ২০১৯ সাল রবি মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২০১৯ সালে ২১ লাখ নতুন গ্রাহকসহ বর্তমানে রবি’র মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৯০ লাখ যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট ৪ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৩ লাখ। উদ্ভাবনী ও প্রতিযোগিতামূলক অফারের ফলে ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে রবি’র গ্রাহক সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৯ সালে দুই অঙ্কের রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে গ্রাহক প্রতি গড় রাজস্বের (এভারেজ রেভিনিউ পার ইউজার বা এআরপিইউ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৩ টাকায়; পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে ডেটা ব্যবহারের মাত্রা ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ৪.৫জি সেবায় রবি’র প্রাধান্যেরই প্রতিফলন। মেশিন লার্নিং সল্যুশনের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে ডাইন্যামিক স্পেকট্রাম শেয়ারিং চালু করায় রবি’র সার্বিক নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে রবি’র গ্রাহকরা সেরা ডেটা নেটওয়ার্ক উপভোগ করছেন। গ্রাহকদের মধ্যে রবি’র ডেটা নেটওয়ার্ক নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়ায় মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার মাধ্যমে যারা অপারেটর পরিবর্তন করেছেন তাদের প্রতি সাত জনের পাঁচ জনই রবিতে এসেছেন।
২০১৯ সালে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিনসহ আয় কর, অবচয় ও অ্যামোর্টাইজেশন (ইবিআইটিডিএ) পূর্ববর্তী রবি’র আয় ছিল ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় রবি’র রাজস্ব আয় শূণ্য দশমিক ৬ শতাংশ কম হয়েছে এবং ইবিআইটিডিএ ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম হওয়ায় চতুর্থ প্রান্তিকে ৯৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চতুর্থ প্রান্তিকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডিএ ছিল ৫৯৫ কোটি টাকা।
বিক্রয় ও বিপণন খাতে এগিয়ে থাকতে প্রচুর ব্যয় এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার স্কিমের (ভোলান্টারি সেপারেশন স্কিম বা ভিএসএস) আওতায় এককালীন ব্যয় হওয়ায় ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে; যার প্রভাবে ইবিআইটিডিএ-ও কমেছে।
অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ সেবা গ্রহণে মৌসুমী প্রভাব, ওটিটি সেবার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং নূন্যতম মূল্যের অভাবে ডেটা সেবায় কঠোর প্রতিযোগিতার ফলে ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকের রাজস্ব শূণ্য দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। পুরো বছরের মুনাফার ওপরই এর প্রভাব পড়েছে।
শুধু ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৬৯২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি। ওই বছর রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ১৯৯৭ সালের যাত্রা শুরুর পর থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি।
নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আরো গুরুত্বারোপ করায় ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মূলধনী ব্যয় হয়েছে ৫৫৭ কোটি টাকা। ওই বছরজুড়ে বিপুল বিনিয়োগ অব্যহত থাকায় মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকায়। কিন্তু টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি অনাপত্তিপত্র বন্ধ রাখায় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় মূলধনী ব্যয় ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ কম হয়েছে।
১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে রবি’র মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ২৪ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। একই সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ২৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে রবি।
রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যখন দেখি এমএনপি সেবার মাধ্যমে অপারেটর পরিবর্তন করা প্রতি সাত জন গ্রাহকের মধ্যে পাঁচ জনই রবিতে আসছেন তখন আর সন্দেহের কোন সুযোগ থাকেনা যে আমরাই সেরা ডেটা সেবা প্রদান করছি। ৪.৫জি সেবা ঘিরে ব্যবসা আরো প্রসারিত করা এবং ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের ওপর জোর দেয়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা অলিভার ওয়াইমেন’র মতে, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স নিয়ে বৈশ্বিক মানের ডিজিটাল টেলকোতে পরিণত হয়েছে রবি।”
তিনি বলেন, “এশিয়াজুড়ে আজিয়াটা অপারেটিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে এনালিটিকস ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ম্যাচিউরিটির ক্ষেত্রে সেরা অবস্থানে রয়েছে রবি। ডিজিটাল কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের নেয়া পদক্ষেপেরই প্রতিফলন এই স্বীকৃতি। এর ফলে আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, রবি এমনভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে যেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে থাকে আমাদের দেশ।”