অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির
উচ্চ রক্তচাপ থেকে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া বিরল বা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। উচ্চ রক্তচাপ যেমন পক্ষাঘাত বা হৃদরোগের কারণ হতে পারে, কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে, তেমনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে দৃষ্টিশক্তিও। এ সমস্যার নাম হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি।
পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া বা অন্ধত্বের বড় কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখ নষ্ট হচ্ছে, এটা খুব সহজে বোঝা যায় না। কারণ প্রক্রিয়াটি খুবই ধীর এবং প্রায় নীরবে ঘটতে থাকে। কেবল নিয়ম মাফিক চোখ পরীক্ষা করতে গিয়ে পরিবর্তনগুলো ধরা পড়তে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের কারণে চোখের পেছনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালিতে পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন-প্রথমে রক্তনালিগুলো সরু ও চিকন হয়ে যায়, চোখের পেছনের রেটিনায় তরল বের হয়ে আসে, রক্তক্ষরণ হতে পারে, অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি রহিত হয়। রোগী সহজেই কোনো সমস্যাই অনুভব করেন না সামান্য দৃষ্টি সমস্যা বা মাঝে মধ্যে মাথাব্যথা ছাড়া।
সাবধান হোন :
রেটিনা বা অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে চিকিৎসার তেমন সুযোগ থাকে না। তাই এর মূল চিকিৎসা হলো প্রতিরোধ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই চিকিৎসা। অনেকেই বলে থাকেন, রক্তচাপ একটু বেশি থাকলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। তাই তারা নিয়মিত ওষুধ খান না।
অনেকের ধারণা, বয়স বাড়লে রক্তচাপ একটু বাড়তেই পারে। এতে ওষুধের দরকার নেই। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। কেবল চোখ নয়, ক্রমে কিডনি, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও দেহের সব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই মধ্যবয়স পেরিয়ে গেলে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা এবং বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণ এড়িযে চলুন। চর্বি-তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে ডায়াবেটিস ও রক্তে চর্বির আধিক্য থাকলে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শমতো জীবনযাপন করুন। বছরে একবার কি দুবার চোখ পরীক্ষা করান। কেবল চশমার পাওয়ার নয়, চোখের সার্বিক পরীক্ষা জরুরি। এজন্য একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লেখক : গ্লুকোমা রোগ বিশেষজ্ঞ
বিভাগীয় প্রধান, গ্লুকোমা বিভাগ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা
চেম্বার : বাংলাদেশ আই হসপিটাল, শান্তিনগর, ঢাকা। ০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫