হায় কমিউনিটি ক্লিনিক! হায়রে স্বাস্থ্যসেবা!!

দয়া করে এগুলো ফ্লাশ কইরেন না ভাই!
জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: দয়া করে এগুলো ফ্লাশ কইরেন না ভাই। সবাই তো আর শতভাগ সঠিক নিয়ম মেনে অফিস করে না। তাই একটু সাহায্য করেন। এগুলো ফ্লাশ করলে অনেক ঝামেলা হয়। তাই দয়া করে কোন কিছু ফ্লাশ (নিউজ) না করার জন্য অনুরোধ করেন বুদ্ধিসর রাজবংশী নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের উত্তর ছনকা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত তিনি। নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন অফিস করার কথা রয়েছে তার। তবে সর্বশেষ ২১ দিনে একবারও অফিসে যাননি বলে মুঠোফোনে জানান তিনি। তবে বেতন ভাতা পাচ্ছেন ঠিকই।
একই অবস্থা সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের। সরেজমিনে জানতে বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। তবে এসব কর্মীদের পক্ষে সাফাইয়ের কোন কমতি নেই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার। আর বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবি এলাকাবাসীর।
শনিবার সকাল পৌণে ১০ টা। সাটুরিয়া উপজেলার আগ তেঘুরী কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে অপেক্ষামাণ কয়েক জন নারী। তবে এখনো ক্লিনিকে আসেনি স্বাস্থ্য কর্মী বা সিএইচসিপি’র কেউ। তবে কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই তারা এসে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস সেবা নিতে আসা এলাকাবাসীরা। প্রায় ১০ টা নাগাদ ক্লিনিকে এসে পৌছালেন ক্লিনিকের সিএইচসিপি জান্নাতুল ফেরদৌস।
আর নিজের শিশুর অসুস্থতাজনিত কারণে ক্লিনিকে আসবেন না বলে মুঠোফোনে জানালেন ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী সুইটি খানম। তবে এজন্য সকাল ১০ টা নাগাদ ছুটিও নেয়নি কারও নিকট থেকে। এভাবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে সাটুরিয়া উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারিরা। একই অবস্থা ক্লিনিকের ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মীদের। সরেজমিনে সকাল ১১ টা নাগাদেও অফিসে দেখা মিলেনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মী মিতু তাসলিমার।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিনই অফিসে উপস্থিত থাকার নিয়ম সিএইচসিপি কর্মীদের। আর সপ্তাহে তিন দিন অফিস করার কথা স্বাস্থ্য সহকারীদের। আর ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মীরা অফিস করবেন সপ্তাহে দুই দিন। করোনা সংক্রামণ এড়াতে কমিয়ে আনা হয়েছে অফিসের কার্য সময়ও। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অফিস করার কথা তাদের। তবুও অফিসে অনিহা এসব স্বাস্থ্য সহকারীদের। এসব বিষয়ে নজরদারি নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষেরও।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএইচসিপি কর্মী  বলেন, আমরা (সিএইচসিপি কর্মীরা) দেরি করে হলেও নিয়মিত অফিস করি। আর স্বাস্থ্য সহকারী আর ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মীরা মাসে কয় দিন অফিসে আসে তার কোন খোঁজ রাখে না কেউ। এসব বিষয়ে একাদিক বার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে বলার পরেও কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। একই ক্লিনিকে চাকরি করে সহকর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া বেমানান বলে অভিযোগ দেননি বলে জানান তিনি।
বরাইদ এলাকার কৃষক আমছের আলী জানান, সরকারি হাসপাতালে (কমিউনিটি ক্লিনিক) মাঝে মাঝে বেশ ভালো ঔষুধ দেয়। আবার অনেক সময় বন্ধও থাকে। তবে নিয়মিত বিনামুল্যে স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক পরামর্শ ও ঔষুধ পেলে বেশ উপকার হবে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুন অর রশিদ  জানান, সকাল ১০ টার দিকে বাচ্চার অসুস্থতাজনিত কারণে স্বাস্থ্য সহকারী সুইটি খানম মুঠোফোনে ছুটি নেয়। অপর স্বাস্থ্য সহকারী বুদ্ধেসর রাজবংশীর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মীরা সময় অনুযায়ী অফিসে করেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Print Friendly

Related Posts