ইমরুল শাহেদ
মালেক আফসারী পরিচালিত এবং এসকে ফিল্মস পরিবেশিত পার্সওয়ার্ড ছবির নেপথ্য ব্যক্তি শাকিব খানের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘন নিয়ে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের ২৩ ধারার সূত্র ধরে গায়িকা দিলরুবা খান মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু ছবিটির প্রযোজক হিসেবে মোহাম্মদ ইকবালও রয়েছেন।
মামলার বাদি হিসেবে শুধু দিলরুবা খান নয়, তার সঙ্গে রয়েছেন গীতিকার কায়সার আহমেদ ও সুরকার আশরাফ উদাস। তাদের পক্ষে মামলাটি করেছেন ব্যারিস্টার ওলোরো আফরিন। তিনি বলেছেন, অনুমতি ছাড়া ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমায় দিলরুবা খানের ‘পাগল মন’ গানের অংশ ব্যবহার করা হয়।
কথাটা মিথ্যে নয়। পাগল মন গানের দুই লাইন ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকগুলো গানের সংমিশ্রণে একটি গান তৈরি করা হয়েছে। অতীতে ঢাকার ছবিতে এ ধরনের চর্চা অহরহই হয়েছে। কেউ কখনো অভিযোগ করেননি।
রাজধানীর বুকে ছবির ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো’ গানটি একই সুরে এবং একই কথায় ঘায়েল ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে। তালাত মাহমুদের গাওয়া এবং কেজি মোস্তফার লেখা এ গানটির জন্য আপত্তি তোলেননি কেউই।
দিলরুবা খানের গাওয়া পাগল মন গানটি প্রায় ২৭ বছর আগে ৭ হাজার টাকায় তোজাম্মেল হক বকুলের পাগল মন ছবির জন্য বিক্রি করেছেন। কিনেছেন ছবিটির প্রযোজক ও প্রদর্শক নাদের খান। একটি ছবির জন্য যখন একটি গান বিক্রি করেন তখন আর কারো কোনো দাবি থাকে না। চলচ্চিত্রশিল্পের এটাই নিয়ম। তিনি যখন গানটি সাত হাজার টাকায় বিক্রি করেন তখন গীতিকার ও সুরকার দিলরুবা খানমের কাছ থেকে কত টাকা ভাগ নিয়েছেন, সেটাও এক্ষেত্রে দেখার বিষয় রয়েছে।
পরিচালক রফিক শিকদার ফেসবুকে লিখেছেন, কপিরাইট আইন অনুযায়ী সিনেমায় ব্যবহৃত প্রতিটি গানের বৈধ স্বত্ত্বাধিকার হচ্ছেন প্রযোজক। কারণ প্রযোজক তার সিনেমায় ব্যবহৃত সকল মেধাস্বত্ত্ব অর্থ মূল্যে ক্রয় করেন। মেধাস্বত্ত্বের মূল মালিক স্বত্ত্ব বিক্রির পর উক্ত স্বত্ত্ব হতে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির অধিকার হারান। এক্ষেত্রে শিল্পী নয়, শাকিব খানের বিরুদ্ধে একমাত্র পাগল মন সিনেমার প্রযোজকই সম্পদ বাজেয়াপ্তের মামলা করতে পারেন।
পক্ষান্তরে ‘অনুমতি ছাড়া একটি শব্দও ব্যবহার করলে সেটি কপিরাইট আইন লঙ্ঘন’- এমনটাই বলেছেন রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট অফিসের (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী। কিন্তু সাহিত্যের কপিরাইট এবং চলচ্চিত্রের এক নয়। জানা গেছে, গানটির স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে গীতিকার প্রয়াত আহমেদ কায়সার, সুরকার আশরাফ উদাস ও কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানকে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর কপিরাইট সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
তাহলে প্রশ্ন আসে, যে গানটি দীর্ঘ সময় আগে ছবির জন্য বিক্রি হয়ে গেছে, কোনো প্রকার খোঁজ-খবর ছাড়াই কপিরাইট অফিস কিভাবে সনদ দেয় বা একটি বিক্রি হয়ে যাওয়া গানের সনদের জন্য তারাই বা কিভাবে আবেদন করেন। দিলরুবা খান ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন, ১০ কোটি টাকার। যে গান তিনি সাত হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন, সে গানের দুই লাইন ব্যবহার করার জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ, বিষয়টি বেমানান বলেই মনে হয়।
যাহোক, বিষয়টি যদি প্রাথমিক স্তরে মীমাংসা না হয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাহলে আগামী দিনের জন্য ধারণাতীত একটা পথ প্রদর্শিত হবে।
লেখক: বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও চিত্র সমালোচক।