আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের প্রথম কাতারে বসবেন অফিসাররা, সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি জরুরী নোটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মসজিদে প্রবেশের দরজাসহ মসজিদের বিভিন্ন জায়গায় টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন মসজিদ কমিটি।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় ও স্থানীয় মুসুল্লিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এলাকায় বইছে প্রতিবাদের ঝড়।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়েছে- সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নামাজের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজ চিহ্নিত জায়গার বাহিরে পড়া যাবে না এবং জামাত দাঁড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত অফিসারগনের সম্মানে সামনের কাতারে না দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। জামাত দাঁড়ানোর সময় সামনের চিহ্নিত খালি জায়গা পূরণ করে দাঁড়াবেন। মসজিদের বাহিরে/রাস্তায় মসজিদের কার্পেট বিছানো হবে না, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।
এই মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আল-আমিন।
ওই মসজিদে নিয়মিত মুসল্লি আকতারুজ্জামান রিপন বলেন, নোটিশটি টানানোর পর থেকে আমি ওই মসজিদে যাওয়া বাদ দিয়েছি। ওটা অফিসারদের মসজিদ।
এদিকে, মসজিদে গত কয়েকদিন ধরে মুসল্লিদের সামনের কাতার বাদ রেখে বসার জন্য বলে আসছিলেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এই মসজিদের সামনের কাতার থেকে মুসল্লিদের উঠিয়ে দেয়ার ঘটনা এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে ইতিপূর্বে।
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ রেজাউল করিম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশক্রমে এ সংক্রান্ত নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়াও শুক্রবার (৩ জুলাই) জুমআ’র নামাজের আগে মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদকের উপস্থিতিতে নোটিশটি পড়ে মুসুল্লিদের জানিয়ে দেয়া হয়। সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি মসজিদ কমিটির। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমি শুধু সেটি বাস্তবায়ন করেছি।
টাঙ্গাইলের ধুলেরচর মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার প্রধান মুফতি ও জেলা কওমি ওলামা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, মসজিদে যে মুসল্লি আগে যাবেন তিনিই প্রথম কাতারে বসবেন। কেবল রাষ্ট্রের এমন ব্যক্তিত্ব যাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে তাদের জন্য ব্যবস্থা হতে পারে। তবে সেটা হবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের হিসেবে। যে কোনও মসজিদে এটা করা যাবে না। অফিসারদের জন্য সামনের কাতার রাখা হলে এটা ইসলাম পরিপন্থী হবে। অফিসারদের জন্য সামনের কাতার রাখার কথা বলা ঠিক হয়নি।
বাসাইল উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মজিবর রহমান হেলালী বলেন, মসজিদে যে আগে ঢুকবেন সেই প্রথম কাতারে বসবেন। মসজিদে কোনও বৈষম্য নেই, সবাই সমান। কাউকে উঠিয়েও দেয়া যাবে না। অফিসাররা প্রথম কাতারে বসবে, এটা হাদিস সম্মত না। মসজিদ কর্তৃপক্ষের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেন এ জন্য নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানানোর জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মসজিদের ঈমাম আগবাড়িয়ে অফিসারদের বিষয়টি লিখেছেন। সামনের কাতারে অফিসাররা বসবেন এটা আমি তাকে লিখতে বলিনি।
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ‘নোটিশের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে জানতে পেয়ে নোটিশটি তুলে নেয়া হয়েছে। আমার অনুমতি না নিয়ে কিভাবে নোটিশ দেয়া হলো এব্যাপারে রবিবার (৫ জুলাই) জরুরী মিটিং আহবান করা হয়েছে।’