বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ৮ জুলাই বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশব্যাপী একযোগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
অবস্থান কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এস.এম শফিউর রহমান দুলু, বিশিষ্ট কবি মোহন রায়হান। এসোসিয়েশনের কো চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল মাজেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ফারুক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সিকদার, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাসিনা আক্তার, তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, পরিকল্পনা সম্পাদক মো. মহসীন মিয়া, দপ্তর সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, শিক্ষা সম্পাদক মো. মোশারেফ হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবুল খায়ের প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সরকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অবদান তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং কিছুটা হলেও বেকারসমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে। চল্লিশ হাজার স্কুলে ১ কোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যদি স্কুলগুলো না থাকতো তাহলে শতভাগ শিক্ষা কর্মসূচি ও টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আরও অন্তত ৩০ হাজার স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হতো। তার জন্য প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় হতো। বলা চলে এ কিন্ডারগার্টেনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বব্যয়ের বিরাট চাপ কমে গেছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো কখনই কোন সরকারি অনুদান পায় নাই এবং পাওয়ার জন্য আবেদনও করে নাই। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো দেশের মত আমরাও দিশেহারা। এজন্য দেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আগেই সতর্ক করেছিলাম, যদি সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয় তাহলে ৭৫% কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে এর মধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে যে, অনেক পরিচালক তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক শিক্ষক পেশা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউবা হকারি করছেনবা কাঁচা তরকারি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল কখনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিষ্ঠাতাগণ কেউ ব্যবসার আশা নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে না। খোলার অন্যতম কারণ বেকারত্ব ঘোচানো এবং শিক্ষা সেবায় অবদান রাখা। আপনি এ দেশের মানুষ। আজ যে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলে পড়াশুনা করছে তাদের বেশিরভাগই কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। ইচ্ছে করলে জরিপ চালিয়ে দেখতে পারেন, স্কুলগুলো সমযোপযোগী আধুনিক শিক্ষা প্রদানে কী অবদান রাখছে, বিশেষ করে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের শ্রম ও কষ্টের সে তুলনায় তাদের আয় খুবই সীমিত। কিন্তু এ পেশায় সম্মান আছে বলেই কষ্ট হলেও তারা এ মহৎকর্মে নিয়োজিত। কিন্তু মাসের পর মাস বন্ধ থাকার ফলে এর মধ্যেই অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, ভাড়া পরিশোধ ও শিক্ষক বেতন দিতে না পেরে ইতঃমধ্যে অনেক স্কুল শোচনীয় অবস্থায় পতিত হয়েছে। আমাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকই নারী। স্কুল থেকে পাওয়া সামান্য বেতনে তাদের সংসার চলে। মুশকিল হল পরিচালকরা নিজেরা সংকটে থাকায় কোন শিক্ষককেই বেতন দিতে পারছে না। ফলে কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারিরা ভীষণ মানবেতর জীবনযাপন করছে। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, করোনা সংকটে তাদের দিনের পর দিন উপবাস থেকে দিন কাটাতে হচ্ছে। আপনার ঘোষিত “টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি” এর লক্ষ্য ছিল শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকর করা। দেশে যে পরিমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা এবতেদায়ী মাদ্রাসা তার বাইরে সবই প্রাইভেট বা কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এই স্কুলের মাধ্যমে ৩০ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হয়। কিন্তু এ সেক্টরের উপর সরকারের নজর থাকলেও কখনো তারা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক কোন সহযোগিতা বা দান অনুদান পায় না। স্থানীয় প্রশাসন বা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও কোন রকম সহযোগিতা করে না। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা এবং এর প্রতি নজর দেয়া একান্ত আবশ্যক। করোনা দুর্যোগের কারণে যেভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাতে সরকারের “টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি” ব্যর্থ হবে। সেটা কারো জন্যই কাম্য নয়। তার জন্য আপনার একটু আনুকূল্য আজ একান্ত প্রয়োজন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ পেশ করেন: ১। শিক্ষা উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা/সহজ শর্তে ঋণ চাই ২। করোনা সংকটে দুর্ভোগ পড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের জন্য বিশেষ অনুদান চাই ৩। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক পরিবারকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাই ৪। ৬ লাখ শিক্ষিত বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কিন্ডারগাটের্ন স্কুলকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চাই ৫। দেশের ১ কোটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ধ্বংসের মুখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! স্কুলগুলোকে বাঁচান ৬। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের অর্থ কষ্ট লাঘবে সরকারি প্রণোদনা দিন ৭। শিক্ষা ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদান রাখা কেজি স্কুলকে সহজ প্রক্রিয়া নিবন্ধন দিন ৮। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা ৯। প্রাথমিক শিক্ষায় অতুলনীয় অবদানের জন্য কিন্ডারগার্টেনকে গুরুত্ব প্রদান করা ১০। যেকোন আপতকালীন সংকট মোকাবেলায় সহযোগীতা চাই।