আতাতুর্ক পাশা
বিদ্যালয়ে প্রতি বছর রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী পালন হতো। সেখানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম গানে, আবৃত্তিতে। তবে গানে বেশিরভাগ সময় সম্মিলিত সংগীতে অংশগ্রহণ করতাম বলে হারমনিয়াম ধরতে শিখিনি।
কলেজে যখন ভর্তি হলাম, তখন সুরবানী সঙ্গীত বিদ্যালয়েও ভর্তি হলাম গান শেখার জন্য। বাসায় একটি হারমনিয়াম ছিল সেটা দিয়েই সরগম সাধন শুরু হলো। সপ্তাহে একটি সরগম সাধনা আর একদিন গানের ক্লাস হতো। ওস্তাদ ছিলেন, আব্দুল আজিজ বাচ্চু।
এ বিদ্যালয়েরই অনেক ছাত্র ঢাকায় আজ বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাদের অনেকেই এই সুরবানী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এন্ড্রু কিশোরও সুরবানী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
সময়টা ৭৪-৭৫ হবে। আমি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত সুরবানী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। একদিন ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গাইছিলাম আর স্কুলের হারমনিয়াম বাজাচ্ছিলেন কিশোর দা। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী তখন চলে গেছে। আমি যখন ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার’ শুরু করলাম তখন কিশোর দা বি ফ্লাটেই হারমনিয়াম বাজাতে শুরু করলেন, তবে একই সঙ্গে ‘দাঁড়িয়ে আছো’ গাইবার স্থানে মা ও কোমল ন রিড চেপে ধরছিলেন এবং গোটা স্থায়ীতেই তিনি এভাবে বাজাচ্ছিলেন, হারমনিয়ামের সুরটি একটু ভরাট হওয়াতে আমার বেশ ভালো লাগছিল। মূলতঃ এখন এসব কাজ পিয়ানো অ্যার্কোডিয়ানেই হয়। কিন্তু এ আইডিয়াটা আমি কিশোর দা’র কাছ থেকে পাই।
সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অনেকেই কিশোর দা’কে বেশ সমীহ করত। আমরা কবে কিশোর দা’র মতো সুন্দর করে গাইতে পারবো, এ কথা শুনে বিদ্যালয়েরই আর এক ওস্তাদ বাদশা ভাই বলতেন- আরে, আগে সাধনা করে গলাটাকে ঠিক কর। সুরের নিয়ন্ত্রণ শেখ্। রাগের ওপর দখল আন্। তারপর তো কিশোরের মতো গাইতে পারবি ? জানিস, কিশোরের নাক দিয়ে যখন সর্দি পড়তো, তখন ওর দিদি এসে কিশোরকে বাচ্চু ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে যায়। কিশোর হাফ-প্যান্ট পড়া শিশু ছিল তখন, ওর নাক দিয়ে সর্দি পড়তো। সেদিন কিশোর মেঝেতে পড়ে গড় করে বাচ্চু ভাইকে প্রণাম করেছিল। তখন থেকে সে গান শিখছে। আর তোরা দুই-তিন মাস সরগম প্র্যাকটিস করেই বড় শিল্পী হতে চাস্ !
সেই কিশোর দা’র সাথে ভার্সিটিতে অনেক অনুষ্ঠানে গান করেছি। তবে আমি সঙ্গীতে থিতু হইনি। আমার অনার্সের সময়ই কিশোর দা’ ঢাকায় চলে আসেন, আর সরাসরি চলচ্চিত্রেই গান শুরু করেন। ঢাকাতে আসার পরও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল কিশোর দা’র সাথে। সব সময় হেসে কথা বলতেন। ওই একই প্রশ্ন, কি, কেমন আছো।
আজকের যে বরেণ্য এন্ড্রু কিশোরকে আপনারা চেনেন, তাঁর দূর অতীতের খুবই সামান্য একটি স্মৃতি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
আতাতুর্ক পাশা : কবি, সাংবাদিক।