তিনি ছিলেন চিরকুমারী

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ আজীবন চিরকুমারী থেকে উদাহরণ তৈরি করে গেলেন রাজনীতিতে ও রাজপথের আন্দোলনে নিষ্ঠাবান প্রাণ সাহারা খাতুন। ৭৮ বছর বয়সের দীর্ঘজীবনে তাই বলে কখনো একাকী থাকতে হয়নি তাকে। স্বজন ও রাজনীতির লোকজন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত দিন কেটেছে যে দম ফেলার ফুসরতও যেন ছিলনা তার। মানুষের সমস্যা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবন। নিজের আরাম আয়েশ সুখের দিকে ফিরেও তাকাননি। দলের কঠিন আন্দোলনেও সবসময়ই সবার আগেও পাওয়া যেতো নিবেদিত প্রাণ এই রাজনীতিককে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শোকবার্তায় সে কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সাহারা খাতুন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন কাজ করে গেছেন এবং দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে আইনিসহ সকল সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন দক্ষ নারী নেত্রী এবং সৎ জননেতাকে হারালো। আমি হারালাম এক পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে সাহারা খাতুনকে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন, তখন তা ছিল চমকের মতোই। কিন্তু তার ঠিক আগে কঠিন সময়ে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েই দলীয় সভানেত্রীর আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে আওয়ামী লীগের যে কজন নেতা দলীয় সভানেত্রীর প্রতি আনুগত্য ধরে রেখে ছিলেন সক্রিয়, তাদেরই একজন সাহারা।

দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকলেও শেখ হাসিনার পক্ষে তখন আইনজীবী হিসেবে দাঁড়িয়েই ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।

বিনা পারিশ্রমিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে করা মামলা পরিচালনায় ভূমিকা রেখেও দলের নেতা-কর্মীদের কাছাকাছি ছিলেন সাহারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার দুই মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাহারাকে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্রোহীদের মাঝেও যেতে হয়েছিল সেখানে।

সরকারের মাঝ পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সাহারাকে।

এরপর মন্ত্রীর দায়িত্ব আর না পেলেও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছিল সাহারা খাতুনকে। ২০০৮ সালের পর দুটি নির্বাচনেই ঢাকা-১৮ থেকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছিল সাহারাকে।

সাহারা খাতুনের জন্ম ১৯৪৩ সনের ১ মার্চ ঢাকায়। তার বাবার নাম আবদুল আজিজ মাস্টার ও মায়ের নাম তুরজান নেছা।

এলএলবি পাস করে সাহারা খাতুন ১৯৮১ সালে আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের জুনিয়র হিসেবে তার কাজ শুরু হয়।

সাহারা খাতুন বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান তিনি।

আইন পেশায় থেকেই আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন সাহারা; আন্দোলনের মাঠে যেমন ছিলেন, তেমনি নির্যাতিত হয়েছেন, জেলও খেটেছেন। ২০০৪ সালের ১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায়ও আহত হয়েছিলেন তিনি।

মাঠের কর্মী সাহারাকে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ। সেবার হারের পর পরবর্তী দুটি নির্বাচনে আর তাকে প্রার্থী করা হয়নি।

তবে জরুরি অবস্থা জারির পর আনুগত্যর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেন সাহারা।

এর আগে গত ১৩ জুন মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। তার এক মাসের মধ্যেই চলে গেলেন রাজপথে আরেক লড়াকু নেত্রী।

https://www.facebook.com/khan1681/posts/10216474055550777

Print Friendly

Related Posts