বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ করোনা মহামারি বাংলাদেশে শুরু হবার সময় থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার অজুহাতে চিকিৎসকরা বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা ও প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছিলেন। যদিও অনেকেই টেলিমেডিসিন সেবা চালু রাখার কথা বলছেন।
সরকারী হাসপাতালগুলিতে কাংখিত সেবা না পেয়ে রোগীরা বেসরকারী ক্লিনিকে দ্বারস্থ হন। আবার সেবায় গলাকাটা ফিস ও নানা ধরনের চার্জ আদায়ের কারনে রোগীরা পরামর্শ ও সেবার জন্য প্রাইভেট চেম্বার নির্ভর হয়ে পড়েন। কিন্তু করোনা মহামারী সংকটে অধিকাংশ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ থাকায় রোগীরা অসহায় হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের নির্দেশনায় বেসরকারী ক্লিনিকগুলি কভিট ও নন-কভিট রোগীদের সেবা প্রদান শুরু করলেও চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারগুলি আজ পর্যন্ত খোলা হয়নি। ফলে প্রাইভেট চেম্বার নির্ভর রোগীরা ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এমতাবস্থায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চেম্বারগুলি খোলার দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
১২ জুলাই ২০২০ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস উপরোক্ত দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন চট্টগ্রাম শহরে হাজার থেকে দেড় হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ জন রোগীর চিকিৎসা ও পরামর্শ দিতেন। আর দৈনিক ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি রোগী নিজেদের নানা অসুস্থতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে হাজার হাজার রোগী অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। নানাভাবে চেষ্টা করেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ বঞ্চিত হচ্ছেন বহু রোগী। অনেক সংকটাপন্ন রোগী শারীরিক যন্ত্রনা ও কষ্ট নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন চিকিৎসা একটি মহান মানবিক পেশা। মানুষের জীবন বাঁচানোই এই পেশার মূল কাজ। আর করোনা যেহেতু স্বাস্থ্যগত সংকট, সেকারনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এখানে মূখ্য ভূমিকায় অবর্তীন হবার কথা। কিন্তু সুরক্ষা সামগ্রীর অজুহাতে অনেকেই রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। অথচ যুদ্ধের ময়দানেও চিকিৎসকরা আহত সৈনিকের চিকিৎসা সেবা দিয়ে জীবন বাঁচান। বাংলাদেশের করোনা মহামারী সংকটে কিছু কিছু চিকিৎসকের বিপরীত ধর্মী ভূমিকায় জাতি হতাশ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন মহামারী সংকটে চট্টগ্রামে আশার আলো জ্বালিয়ে উদাহারণ তৈরী করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের ডাক্তার বিদ্যুৎ বড়ুয়ার ফিল্ড হাসপাতাল। করোনা চিকিৎসায় অনন্য ভূমিকা রেখে ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী বেশ নন্দিত হয়েছেন।স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি উপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করায় চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা রোগীদের সেবায় সার্বক্ষনিক কাজ করলেও সংক্রমনের হার নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও বিএমএ নেতৃবৃন্দ জনস্বার্থ ও মানবিক বিবেচনায় দ্রুত প্রাইভেট চেম্বার খোলার বিষয়ে আন্তরিক হবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধানগুলি নিশ্চিত করে সেবা দিলে সাধারণ রোগীদের কষ্ট লাঘব হবে। রোগীর সিরিয়াল দেয়ার সুনির্দিষ্ঠ সময় নির্ধারন করা, টাইম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা, অহেতুক চেম্বারে রোগী অপেক্ষা না করা, অধিক রোগী ও তাদের স্বজনদের জড়ো না করা, চেম্বারে প্রবেশের সময় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, টার্মাল স্কেল ব্যবহার করার মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধান শতভাগ নিশ্চিত করে, সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করে চেম্বারগুলি সচল করার দাবি জানান।