রিপন শান : ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বদ্দার বাড়ীতে বসবাসরত অসহায় নুরুন্নাহারের স্বামীর বসত ঘরটি ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিরাজ বদ্দার ও তার লোকজন। ফলে ঘর হারিয়ে প্রায় ২০ দিন যাবত ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে নুরুন্নাহার।
ভুক্তভোগী নুরুন্নাহার জানায়, তার স্বামীর নাম মিরাজ বদ্দার। প্রায় ১৩ বছর আগে মিরাজ বিয়ে করে তাকে। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। বিয়ের পর নুরুন্নাহার তার বাপের বাড়ীতেই থাকত। আর মিরাজ চট্রগামে কাজ করত। এরই মধ্যে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। হঠাৎ মিরাজ চট্রগ্রাম যাওয়ার পর আর কোন খোজ খবর নেয় না তার। নুরুন্নাহার তার মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ীতে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কোন রকমে চলছে।
প্রায় ৮ বছর পর চট্রগ্রাম থেকে নুরুন্নাহারের ভাই মিরাজকে খোজ করে বাড়ীতে নিয়ে আসে। বাড়ীতে এসে মিরাজের সাথে ফুলবাগিচা বাজারে এলাকার লোকজনের সাথে শালিস বসে। শালিসে জানা যায় মিরাজ এর আগে চট্রগ্রামে একটি বিয়ে করেছে। শালিসে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় মিরাজের বাড়ীর জায়গায়/ভিটায় নুরুন্নাহার মেয়েকে নিয়ে থাকবে এবং তাদের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৩ হাজার করে টাকা দিবে। এজন্য মিরাজ শালিসের কাছে স্টাম্পে স্বাক্ষর দেয়। যা এখনও নুরুন্নাহারের কাছে রয়েছে।
শালিসের কিছুদিন পর মিরাজ গোপনে তার ভাইদের কাছে তার সম্পূর্ণ (২২শতাংশ) সম্পত্তি হেবা দলিল দিয়ে চট্রগাম চলে যায়। নুরনাহার স্বামীর ভিটায় মেয়েকে নিয়ে কাজকাম করে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে পড়ে রয়েছে। দলিলের ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী আবার শালিসে বসে সিদ্বান্ত প্রদান করে যেহেতু নুরুন্নাহার তার স্বামীর ভিটায় বসবাস করছে এবং তার স্বামী গোপনে সমস্ত সম্পত্তি ২ ভাইকে হেবা দলিল দিয়ে গেছে, এখন অসহায় মহিলা কোথায় যাবে ?
তাই সিদ্ধান্ত হয় নুরুন্নাহারকে তার স্বামীর ২ ভাই ৫ শতাংশ জমি দলিল দিবে সে তার ঘর ভিটাতে মেয়েকে নিয়ে থাকবে এবং এ ব্যাপারে শালিসে সাদা কাগজে একটি লিখিত দেন দুই ভাই রফিক ও সিরাজ বদ্দার।
নুরুন্নাহার এর মধ্যে একদিন স্বামীর অংশের একটি গাছ কাটার কারনে স্বামীর ভাই রফিকের স্ত্রী ও শালী মিলে তাকে দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তার ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে।
গত ১ জুলাই ২০২০ তারিখে সিরাজ বদ্দারের নেতৃত্বে মান্নান, জাহিদ,আকতার, শামীমসহ এলাকার পালোয়ানেরা নুরনাহারের আশ্রয়ঘরটি ভেঙ্গে দেন। নুরুন্নাহার অনেক কান্নাকাটি করেও কারও মন গলাতে পারেনি। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে তার ঘরের পাশের বাগানে মেয়েকে নিয়ে ২ রাত নির্ঘুম কাটায় নুরুন্নাহার। তার আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা স্বামীর ঘর ভেঙ্গে রাস্তার ফেলে রেখেছে জোতদাররা। অসহায় নুরুন্নাহারের পক্ষে ভয়ে কোন লোক কথা বলেনি।
এখন ঝড়বৃষ্টির মধ্যে খেয়ে না খেয়ে একমাত্র মেয়ে সহ মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় নুরুন্নাহার।