বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে জলবায়ু শরণার্থীদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তসহ দেশের সকল জনগণের জন্য মুজিববর্ষে আবাসন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। তাঁর জন্ম শতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষকে যেভাবে পারি, গরিবানাহালে একটি চালা হলেও আমরা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারে ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা এ সময় বন্যা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের সকল ধরণের প্রস্তুতি থাকার উল্লেখ করে বলেন, ‘এবারে বন্যার প্রকোপটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা হচ্ছে শ্রাবণ মাস, হয়তো ভাদ্র মাসের দিকে আরো পানি আসবে অর্থাৎ আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো বন্যার আশঙ্কা থাকতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আছে সেটা মোকাবেলা করার। সেইসাথে বন্যা এবং নদী ভাঙ্গণে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তাঁদেরকেও আমরা ঘর-বাড়ি তৈরীর জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেব। সেটাও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে এবং সেজন্য এবারের বাজেটে আমরা আলাদা করে টাকা বরাদ্দ রেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকেও আমি বলবো কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দরভাবে বাস করবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা মুজিববর্ষে একদিকে যেমন বৃক্ষরোপন কর্মসূচি নিয়েছি তেমনি গৃহহারাদের ঘর-বাড়ি করে দেব এবং যাতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জীবন-মান উন্নত হয় সেটাও আমরা দেখবো।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপকূলবাসীকে বেশি করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও পুণর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের গতি খুব ভাল ছিল । কিন্তু এই করোনাভাইরাস এসে সব জায়গাতেই একটা বাধার সৃষ্টি করেছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি সকলকে অনুরোধ করবো আপনারা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে সেগুলো মেনে চলবেন। মাস্কটা পড়ে থাকবেন, যখন বাইরে যাবেন বা কারো সাথে কথা বলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন।’

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ গণভবন থেকে এবং দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী কক্সবাজার প্রান্ত থেকে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে প্রকল্পের একটি রেপ্লিকাও তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং প্রকল্পস্থানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তিনজন উপকারভোগী তিনটি গাছের চারাও রোপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সে উপকারভোগী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

কক্সবাজারের খুরুসকুলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠান স্থলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফ্লাট প্রাপ্ত পরিবারগুলোর হাতে ফ্লাটের চাবি তুলে দেওয়া হয়।

এদিন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে নির্মিত ২০টি পাঁচ তলা বিশিষ্ট ভবনে ৬শ’টি পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার এখানে ফ্ল্যাট পাবে।

প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বুধবার এই প্রকল্প সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রতিটি পরিবার এখানে ১০০১ টাকার বিনিময়ে একটি প্রায় ৪৫৬ স্কয়ার ফিটের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্লাট পাবে। যেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক র‌্যাম্প, সোলার প্যানেল, বিশুদ্ধ পানির সুবিধা, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং গ্যাস সিলিন্ডার সম্বলিত চুলার ব্যবস্থা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ১৩৯টি ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার পুণর্বাসিত হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮শ’ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্প এলাকায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, ১৪টি খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দু’টি জেটি এবং দু’টি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।’

প্রকল্পে আবাসন, পর্যটন ব্যবস্থা, শুটকি পল্লী বা ‘শুটকি মহল’ এবং সবুজ বনায়নসহ চার ধরনের সুবিধা থাকবে বলেও তিনি জানান।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি, এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তুলবে সরকার, বলেন তিনি।

Print Friendly

Related Posts