বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কক্সবাজারে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের পর রামু থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়েছেন ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা রাণী দেবনাথ।
একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া তাদের অপর সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের জামিন শুনানি হলেও আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেনের আদালতে জামিন পান শিপ্রা। শিপ্রা দেবনাথের আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া তপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত শিপ্রার জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। আদেশের লিখিত কপি কারাগারে পৌঁছার পর যে কোনো সময় মুক্তি পাবেন শিপ্রা।
এদিকে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের আরেক সহকর্মী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (টেকনাফ- ৩) এর বিচারক তামান্ন ফারাহর আদালতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু জানিয়েছেন, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও মাদকের দুটি মামলায় সিফাতের জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছে আদালত।
মেজর (অব.) সিনহা প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য ৩ জুলাই কক্সবাজার এসেছিলেন। এই কাজে তার সহযোগী ছিলেন সিফাত, শিপ্রা এবং তাদের সহপাঠী তাহসিন রিফাত নুর। প্রামাণ্যচিত্রের প্রযোজক ছিলেন সিনহা। তারা সবাই উঠেছিলেন হিমছড়ি সৈকত তীরের নীলিমা রিসোর্টে।
চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহত হওয়ার সময় নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন শিপ্রা ও তাহসিন। ঘটনার কিছু সময় পর পুলিশ ওই রিসোর্টে অভিযান চালায়। পুলিশ সেখান থেকে তাদের আটক করে রামু থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে তাহসিনকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলেও শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। পুলিশ শিপ্রার কক্ষ থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, এক লিটার বাংলা মদ এবং এক পোটলা গাঁজা উদ্ধারের দাবি করে মামলায়। তবে পুলিশের এসব ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর গত ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্তদল গঠন করে। গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ জুডিসিয়িাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে প্রধান ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাতেই টেকনাফ থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার ৭ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র্যাবকে। আদালতে র্যাব প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া অনুপস্থিত ২ জন আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
জেলা পুলিশের দাবি, মামলায় পলাতক থাকা এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা নামের কোনো পুলিশ সদস্য বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র ও টেকনাফ থানায় কর্মরত ছিল না।
শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের ফটকে ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।