বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে কলেজ খোলা গেলে ওই সময়েই পরীক্ষা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বাদে এ বছর অনুষ্ঠিতব্য বাকি সব পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় নীতিগতভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সে অনুযায়ী, সভা থেকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুবুর রহমান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন অংশ নেন।
জানা যায়, সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার চিন্তা থাকলেও শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সেভাবে না হওয়ায় এটি সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিলেবাস শেষ করা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক কোনো পাবলিক পরীক্ষায় নামানো সমীচীন হবে না। এ কারণে এ বছর নভেম্বরে হতে যাওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদন চাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিললে এ বছর এ তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পরীক্ষা তিনটির মধ্যে পিইসি পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেএসসি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং জেডিসি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। এ তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখন তাদের নিজ নিজ পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে পৃথকভাবে প্রস্তাব পাঠাবে।
এদিকে যেসব ক্লাসে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই, সুবিধাজনক সময়ে সেসব ক্লাসে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে কোনো কারণে বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা না গেলে বা নেওয়া সম্ভব না হলে এ বছর সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হবে। অন্তত সাড়ে পাঁচ মাস ক্লাস-পাঠদান বন্ধ থাকায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও কারিকুলাম ম্যাপিং চূড়ান্ত করতে বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তব বোর্ডে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
পরীক্ষা বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন সমকালকে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা পিইসি পরীক্ষা বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করছি। খুব শিগগিরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই এবারের জন্য এ পরীক্ষা বাতিল হবে।
সিনিয়র সচিব বলেন, করোনার কারণে টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি ঠিকই, তবে সব শিক্ষার্থীর কাছে আমরা পৌঁছাতে পারিনি এটি বাস্তবতা। কারণ সবার বাসায় টেলিভিশন বা রেডিও নেই। অনেক অসচ্ছল পরিবার আছে। সুতরাং সবার কথা ভেবেই আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই তারা স্কুলে যাবে। যেহেতু কবে স্কুল খোলা যাবে, তা আমরা জানি না। তাই একাধিক বিকল্প হাতে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।
জেএসসি, জেডিসি ও প্রাথমিক সমাপনী বাতিল হলেও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে ভিন্নতর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বছর এ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে। এর কারণ জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেওয়া এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এইচএসসির পরীক্ষার্থীরা তাদের সব সিলেবাস ও কারিকুলাম এরই মধ্যে সম্পন্ন করে বসে আছে। তাই তাদের পরীক্ষা না নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এ ছাড়া এই কারিকুলাম ও সিলেবাস দুই বছরমেয়াদি এবং পাবলিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে এটি সর্ব উচ্চে। এ ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলে পরবর্তীতে এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একাধিক জটিলতায়ও পড়বে। সব দিক থেকে ভেবেই তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর জন্য এরই মধ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। গত ১ এপ্রিল থেকে এ পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী এবার এ পরীক্ষায় অংশ নেবে।
বোর্ডগুলোর একাধিক সূত্রমতে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থী কমিয়ে একটি বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষার্থী বসানো হবে। একটি কক্ষে যতগুলো বেঞ্চ থাকবে, ততজন পরীক্ষার্থীর আসন নির্ধারণ করা হবে। কোনো কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে পার্শ্ববর্তী ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হবে। এজন্য কেন্দ্র বাড়ানো হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর গেটের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। পরিদর্শক ও পরীক্ষার্থীরা ভালোভাবে হাত পরিস্কার করে ভেতরে প্রবেশ করবেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অবশ্যই নিতে হবে। পরীক্ষা শুরু করতে আমরা একটি রোডম্যাপ তৈরি করছি। পরীক্ষার জন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ হচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জরিপ করে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হবে। এক বেঞ্চে একজন বসবে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ নেওয়া হবে।