টাঙ্গাইলে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়াল

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে করোনা শনাক্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আর এতে করে জেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরও ৬৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৬ জনের।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বিকালে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. ওয়াহীদুজ্জামান শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদরে ১১ জন, কালিহাতীতে ৫ জন, মির্জাপুরে ১ জন, দেলদুয়ারে ৩ জন, গোপালপুরে ২ জন, মধুপুরে ৭ জন, ধনবাড়ীতে ১১ জন, ঘাটাইলে ১৮ জন, সখীপুরে ২ জন, বাসাইলে ১ জন এবং ভূঞাপুর উপজেলায় ৫ জন রয়েছেন। জেলার সিভিল সার্জন অফিস বলছেন, শনাক্তের সাথে সাথে সুস্থতার হারও ক্রমাগত বাড়ছে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানান, ঢাকায় প্রেরিত গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবারে ২২৪টি নমুনার ফলাফল আজ সকালে আসে। এতে নতুন করে আরও ৬৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩৬২ জন। আর চিকিসাধীন রয়েছেন ৬১০ জন। এদের মধ্যে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ৫৮১ জন।
সূত্র আরও জানায়, গত ৮ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সদর উপজেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে বাসাইল উপজেলায়। মৃত্যুর হিসাবেও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। জেলায় এপ্রিল মাসে ২৪ জন, মে মাসে ১৪১, জুন মাসে ৪৪৭ এবং জুলাই মাসে ১০২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর চলতি মাসে ৩৬৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয় । মাসভিত্তিক করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে জেলায় করোনা শনাক্তের ১২৭তম দিনে শনাক্তের  সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে।
করোনায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৭৩৪, মির্জাপুরে ৩৭৯, মধুপুরে ১৪২, সখীপুরে ১০৩, কালিহাতীতে ১০৬, ভুঞাপুরে ১০৩, ঘাটাইলে ১১৪, গোপালপুরে ৭২, দেলদুয়ারে ৭৪, নাগরপুরে ৬২, ধনবাড়ীতে ৬৮ এবং বাসাইল উপজেলায় ৪৯ জন রয়েছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ঘাটাইল পৌরসভার হিসাবরক্ষক এবং একই উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও করোনায় আক্রান্ত হয়। অপরদিকে সখীপুর উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতালের এমবিবিএস চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় প্রথম দিকে করোনায় শনাক্তের  সংখ্যা কম ছিল। তখন মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ প্রশাসক কঠোরভাবে কাজ করে। এমনকি তখন লকডাউনও ছিল কঠোরভাবে। তখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ঠিক মতো মেনে চলছিল। যার ফলশ্রুতিতে শনাক্তের সংখ্যাও কম ছিল এবং করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। কিন্তু লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। যা বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রামপদ রায় জানান, সদর উপজেলায় মোট করোনা শনাক্তের মধ্যে পৌর শহরেই ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ রোগীর শনাক্ত হয়েছেন। করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে নিজেই নিজের সচেতন হতে হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে এবং মাস্ক পড়তে হবে। এছাড়া করোনা নমুনা দেয়ার পর থেকে নমুনার ফলাফল আসা না পর্যন্ত নিজ বাসায় আইসোলেশনে থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, মানুষ আগের তুলনায় স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করছে না। মানুষকে নিজেই নিজের সচেতনতা হতে হবে। মূলত মানুষ করোনাকে ভয় পাচ্ছে না। ৫ মাস হতে চললো এখনো যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে, জোর করে মানুষকে সচেতনা করা কঠিন। এর জন্য করোনা শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু পরে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। আগে থেকে যারা অসুস্থ তারা ছাড়া সাধারণ সুস্থ মানুষের করোনা হলে তেমন কিছু হচ্ছে না বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ বাসা থেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, করোনায় টাঙ্গাইলের নবাগত জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, সিভিল সার্জন, মেয়র, প্যানেল মেয়র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
Print Friendly

Related Posts