বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে টানা বৃষ্টি এবং নদনদীতে অতি জোয়ারের পানির চাপে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকা বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে জোয়ার-ভাটার খেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়লে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। ভাটার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমছে না। পানিতে ভেসে গেছে হাজারো পুকুর ও মাছের ঘের। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট, কাঁচা ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত।
খুলনা :গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং নদীতে জোয়ারের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। বুধবার থেকে বাঁধে ভাঙন ও বাঁধ উপচে পানি গ্রামে প্রবেশ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার নতুন করে কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কয়রা খালের বাঁধ ভেঙে আরও তিনটি গ্রামে লোনা পানি ঢুকে পড়েছে। আগের দিনের ভাঙন ও জোয়ারে বাঁধ উপচে আসা পানিতে বর্তমানে পানির নিচে রয়েছে সাতটি গ্রাম।
বাগেরহাট :অতিবৃষ্টির ফলে বাগেরহাটে বেশির ভাগ এলাকার সড়কে পানি জমেছে। অতিবৃষ্টির প্রভাবে জেলার চিতলমারী, ফকিরহাট এলাকায় বিভিন্ন ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, আমি পাঁচ একর জায়গা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ঘের করি ও ঘেরের পাশে সবজি চাষ করি; যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। কয়েকদিন ধরে অতিবৃষ্টির কারণে আমার ঘের পানিতে ডুবে গেছে। চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
সাতক্ষীরা :বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে শ্যামনগরের নেবুবুনিয়া এলাকায় উপকূল রক্ষা বাঁধ খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙন কবলিত অংশের ছয়টি পয়েন্ট দিয়ে পানির প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে। আম্পান তাণ্ডবের পর একই এলাকায় রিং বাঁধ মেরামত করা হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে আবারও ভাঙনে মুখে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ভোলা :মেঘনা নদীর জোয়ারের চাপে ভোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের মুরাদ ছবুল্লা গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। সকাল থেকে ভোলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় উত্তাল মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরি ও ভোলা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল।
লক্ষ্মীপুর :বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটসহ চার-পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাটসহ নিম্নাঞ্চল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বন্ধ হয়েছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচল। চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে যাত্রীরা। অন্যদিকে প্রবল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের ১৫টি গ্রাম। জোয়ারের পানিতে ফের হুমকির মধ্যে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষ্মীপুর সদরের চররমণীমোহন, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর এলাকার ঘরবাড়ি।
নোয়াখালী :উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেয়ারিংচর, নলচিরা, সুখচর, ঢালচর, তেল্লারচর, জাগলারচর, বদনারচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, সোনাদিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম এবং হাতিয়া পৌর এলাকার চরকৈলাশগ্রাম বেজুগালিয়াগ্রাম লক্ষ্মীদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকা এখন পাঁচ-সাত ফুট পানির নিচে রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নলচিরা, সুখচর, চরঈশ্বর, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের এবং প্রশাসনিক এলাকা নলেরচর ও বয়ারচরের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়।