বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
সেই রাতে গাড়ি থেকে নামার এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজরসিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করা হয়। এমন তথ্য দিয়েছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার। তিনি জানান, সেদিন এক-দেড় মিনিটের মধ্যে কী এমন হয়েছিল তা জানতে প্রতিটি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ তাই হুট করে কিছু বলা যাবে না। আমরা ডিটেইলসে যাচ্ছি। কেন ফায়ারিং হয়েছে তা তুলে আনার চেষ্টা করছি।
লিয়াকত যেটা বলছে, সিনহা পিস্তল তাক করে ফেলেছিল। আসামি লিয়াকতের কথা যদি সত্যি হয় তবে কী ঘটনায় সিনহা পিস্তল তাক করল এবং লিয়াকত গুলি করল- সব বিষয় বের করার চেষ্টা চলছে।
অল্প সময়ের মধ্যে ফায়ারিং পর্যন্ত চলে যাওয়ার ঘটনা কোন পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছে তা বুঝতে চেকপোস্ট থেকে চেকিং পয়েন্ট, ব্যারিকেড থেকে গাড়ির দূরত্ব, প্রত্যক্ষদর্শীদের দূরত্ব সব কিছু দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে সিনহা হত্যা মামলার তিন আসামিকে নিয়ে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের ঘটনাস্থল বাহারছড়ার শামলাপুর চেকপোস্টে যায় র্যাব।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলির বিষয়ে বিস্তারিত জানতেই আসামিদের ঘটনাস্থলে নেয়া হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা র্যাবের কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করে আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত।
টিম পৌঁছার আগেই চেকপোস্ট অঙ্গন ৩১ জুলাই রাতে ঘটনার সময় যেমন ছিল, শুক্রবার ঠিক সেভাবেই সাজানো হয়েছিল। ঘটনাস্থলে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের ব্যবহৃত গাড়িটির মতো একটি প্রাইভেট কারও রাখা হয়েছিল।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে সেদিন ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছিল তা হুবহু দেখিয়েছেন আসামিরা।
তাদের ঘটনার বিবরণ খুব সূক্ষ্মভাবে প্রত্যক্ষ করেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কয়েক ঘণ্টা ধরে তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার। তিনি বলেন, এমন কী ঘটনা ঘটেছিল সিনহাকে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই গুলি করা হল।
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ তিন আসামিকে মেরিন ড্রাইভের ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাটি আসামিরা হুবহু উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নানাভাবে বিশ্লেষণ করে ঘটনা যাচাই করছেন।
এ ঘটনায় নির্দোষ কেউ যাতে জড়িয়ে না যায় বা কোনো দোষী ব্যক্তি যেন ছাড় না পায়, সব বিবেচনা করেই স্পর্শকাতর মামলাটির তদন্ত চলছে। কোনো সত্য যাতে গোপন না থাকে, সেজন্য প্রতি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বরখাস্ত ইন্সপেক্টর আসামি লিয়াকতের বক্তব্য মতে, ঘটনার রাতে সে নিজেই (লিয়াকত) ৪০ সেকেন্ডে সিনহার শরীরে চারটি গুলি করে।
এর মধ্যে তিনটি গুলি শরীরে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। একটি মিসফায়ার হয়। যে কারণে সিনহার শরীরে ছয়টি ছিদ্র পাওয়া যায়। আর গুলির খোসা লেগে সিনহার গলাসহ কয়েকটি স্থানে যখম হয়।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলাল র্যাব রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে সিনহার সহকর্মী শিপ্রা রানী দেবনাথের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ও টাকাসহ জব্দকৃত ২৯ প্রকার মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে রামু থানা পুলিশ। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরে রামু থানার হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্ট থেকে এসব উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ১৯ আগস্ট র্যাবের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ জব্দকৃত মালামাল মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।
পরদিন বিকেলে এসআই শফিকুল ইসলাম রামু থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিচারিক হাকিম মোহাং হেলাল উদ্দিনের আদালতে আবেদন করেন, জব্দ করা ইলেকট্রনিকস ডিভাইসগুলো তাদের হেফাজতে রাখতে।
কিন্তু আদালত শুনানি শেষে পুলিশের আবেদন খারিজ করে দেন এবং বিচারক তামান্না ফারাহর আদেশটি বহাল রাখেন।
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকারের নেতৃত্বে র্যাবের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় রামু থানা থেকে এসব মালামাল গ্রহণ করে। এ সময় রামু থানার ওসি আবুল খায়ের উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার জানিয়েছেন, ল্যাপটপ, মোবাইল, হার্ডডিস্ক, দুই লাখ টাকাসহ ২৯ প্রকার মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। এসব ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা তদন্তসাপেক্ষে জানানো হবে।