রিপন শান: পায়রার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলীর নদীবর্তী মানুষ। সমুদ্রে লগুচাপ, অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার প্রভাবে পায়রা ‘বুড়িশ্বর’ নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত ২২ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।
পায়রা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দু’উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে আমতলী ফেরীঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে জেলা সদরের সাথে তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ ছিল। হুমকির মুখে উপকূলীয় জেলা বরগুনার আমতলী ও তালতলীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ।
জানাগেছে, সমুদ্রে লগুচাপ, অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার প্রভাবে দুইউপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পায়রা বুড়িশ্বর নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে উপকূলীয় এ দুই উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে বসবাসরত ২২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আবার অনেক স্থানে ভাঙ্গা বেরীবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে কয়েক শত একর ফসলী জমি।
২২ আগস্ট শনিবার পায়রা নদীতে জোয়ারের পানিতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দর, কুকুয়াহাট, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আঙ্গুলকাটা, নাইয়াপাড়া, আমুয়ারচর, লঞ্চঘাট, ফেরীঘাট, শ্বশানঘাট ও তালতলি উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকিরহাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুলবাড়িয়া, আশারচর, নলবুনিয়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী ও খোট্টারচরসহ ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেরীবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে দু’উপজেলার কয়েকশত একর ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। হুমকীর মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধগুলো।
আজও জোয়ারের পানিতে আমতলী- পুরাকাটা ফেরীঘাটের গ্যাংওয়ে কোমড়সমান পানিতে তলিয়ে গিয়ে সকাল থেকে বরগুনা জেলা সদরের সাথে আমতলীর ৫ ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ ছিল। অপরদিকে দু’উপজেলার ভেরীবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়লেও নতুন করে নদী ভাঙ্গনের কোনো সংবাদ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী এলাকার বাসিন্দা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন- সমুদ্রে লঘূচাপ, অতিবর্ষণ ও আমাবশ্যার জো এর প্রভাবে পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের বাড়ীঘরের অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এখানে বসবাসরত পরিবারগুলো।
তালতলী উপজেলার খোট্টার চরের বাসিন্দা আবদুস সোবাহান বলেন- সমুদ্রে লঘূচাপ, অতিবর্ষণ ও আমাবশ্যার জো এর প্রভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমিসহ এ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে বসবাসরত প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাড়ী ঘর তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা চরে বসবাস করি ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কারনে গরু বাছুর হাঁস মুরগি নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম গণমাধ্যমকে জানান, দু’উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পায়রা নদীসহ জেলার সকল নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে বেরীবাঁধ ভাঙ্গনের কোন সংবাদ এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে ভাঙ্গা ভেরীবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে অনেক এলাকার ফসলী জমি ও ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়েছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।