৫ বছরেও শেষ হয়নি হোসনি দালানের বোমা হামলার বিচার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুরনো ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলার বিচার ৫ বছরেও শেষ হয়নি।

রাত দুইটার দিকে জেএমবির এই বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার আইনি জটিলতার কারণে শেষ হয়নি আজো। চার্জশিটে দুই নাবালককে সাবালক দেখানোর কারণে ২২ মাস ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ স্থবির রয়েছে।

এখন আইনি জটিলতা কেটে গেছে, মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটিতে ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জগঠনের পর গত ৩ বছরের অধিক সময়ে মাত্র ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে থাকা এ মামলায় সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। আগামি ২৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

মামলাটি সম্পর্কে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার জাকির বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে। দুই আসামি নাবালক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বিচারের জন্য সম্পূরক চার্জশিট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ছিল। এর মাঝে আবার কারোনাভাইরাসের কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।  আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে সাক্ষী নিয়মিত আদালতে হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাবো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে মারাত্মক ত্রুটি করেছেন। দুইজন নাবালককে তিনি সাবালক করে চার্জশিট দিয়েছেন। মূলত তদন্ত কর্মকর্তার ত্রুটির কারণে মামলটির বিচারকাজ এগোচ্ছিলো না। গত দুই বছর থেকে মামলাটিতে কোন সাক্ষ্য হয়নি। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা দুই নাবালকের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছেন। কিন্তু নাবালকদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে তিনি আবারও গাফিলতি করেছেন। ওই দুই নাবালকের বিরুদ্ধে তাকে দোষীপত্র দিতে হবে। এর কারণে আবারও বিচার আটকে যেতে পারে। আর এ কারণে অন্য আসামিরাও বিনা বিচারে কারাগারে রয়েছেন।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা দুই নাবালকের বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছিলেন সেই ধারা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আসামি কিশোর হলে তার সর্বোচ্চ সাজা হলো ১০ বছর কারাদণ্ড। তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা অনেক বড় ভুল করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে হোসনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় এসআই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি চকবাজার থানা পুলিশ তদন্ত করে।  পরে এর তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।

জানা গেছে, ওই হামলায় ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিন জঙ্গি ক্রসফায়ারে মারা যায়। চার্জশিটভূক্ত আসামিরা সবাই জেএমবির সদস্য। মামলার আসামিদের মধ্যে নেত্রকোণার কলমাকান্দার লেংগুড়া মধ্য পাড়ার ওমর ফারুক মানিক, একই উপজেলার হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বড়ইতলী গ্রামের শাহজালাল মিয়া এবং গাইবান্ধার সাঘাটার ডিমলা পদুম শহরের চান মিয়া জামিনে রয়েছেন।

অন্যদিকে সাঘাটার কচুয়া দক্ষিণপাড়ার কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, বগুড়ার আদমদীঘির কেশরতা গ্রামের আরমান ওরফে মাসুদ রানা মাসুদ ওরফে সুমন, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, দিনাজপুর কোতোয়ালির ঘাসিপাড়ার আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মন, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম ইব্রাহিমনগর বালুরমাঠ এলাকার আরমান ওরফে মনির, কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মুসায়াব ও দিনাজপুরের রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব ওরফে সুমন কারাগারে রয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় অপর দুই জেএমবি কমান্ডার আবদুল বাকি ওরফে আলাউদ্দিন ওরফে নোমান ও সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts