আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করাতেই এক বৃদ্ধার নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬শত ২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে ।ভূক্তভােগী’র সেচপ্রকল্পে না আছে তার, না আছে খুঁটি ,না আছে বিদ্যুতের সংযােগ। অথচ প্রায় পাঁচ বছর পর তার নামে অবাঞ্চিত বিল এবং বিল খেলাপির দায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ড (পিডিবি) অধীন টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেছেন।
হতভাগ্য ভূক্তভােগীর নাম শ্যামলা বেগম (৬৪)। তিনি উপজেলার কাশিল ইউপি’র দাপনাজাের হাকিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুল সবুর মিয়ার স্ত্রী।
বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক পৌর এলাকার মশিউর রহমান বিদ্যুত নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১এর অধীন আবেদন করেন শ্যামলা বেগম। ওই সময় দাপনাজাের হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াক এলাকার ১২জনের কাছে থেকে সেচ মেশিন বিদ্যুতের লাইন পাইয়ে দিতে স্থানীয় শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে মশিউর রহমান বিদ্যুত বিভিন্ন খরচ বাবদ ১১লাখ টাকা নেয়। পরের বছর ১১ জনের বিদ্যুৎ সংযােগ পেলেও শুধুমাত্র শ্যামলা বেগম প্রতিক্ষিত বিদ্যুৎ সংযােগ থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযােগ করেন।
তার পরিবার আরাে জানায়, দূরত্বের অজুহাতে ওই সময় তাদের সংযােগ দেয়া হবেনা এবং ওই নামের সংযােগটি বাতিল বলে সংশ্লিষ্টরা চলে গেলেও সম্প্রতি সেচপাম্পের বিপরীত শ্যামলা বেগম নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬শত ২৭ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেন বিদ্যুৎ বিভাগ। শুধু এতেই শেষ নয়।
টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবা) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালত একটি মামলাও দায়ের করেন।
এ মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিবাদী বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে আদালত হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে শ্যামলা বেগম বলেন, ১১জন বিদ্যুৎ সংযােগ পেলাে অথচ আমি পেলাম না। সেচ মেশিন বিদ্যুতের লাইনের জন্য ৮০ হাজার করে টাকা গেল, আবার ভৌতিক বিলও আসলাে। বৃদ্ধ বয়সে আমাকে মামলায় জড়ানাে হলো । আমি এই হয়রানীর বিচার কােথায় পাবো?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে আমার আকুল আবেদন এই হয়রানিমূলক মামলার দায় থেকে আমাকে মুক্তি পেতে সাহায্যে করবেন এবং যারা এ হয়রানী এবং দূর্নীতির সাথে যুক্ত তাদের শাস্তি দিবেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ লাইনের জন্য শ্যামলা বেগম আবেদন করলেও বিদ্যুৎ কর্তপক্ষ খুঁটি ,তাঁর ,সংযােগ কােনটাই দেয়নি। অথচ বিদ্যুৎ বিল খেলাপি মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে টাকা লেনদেনকারী স্থানীয় মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে আমার হাত দিয়েই ১২টি সেচ সংযােগের জন্য বাসাইলের মশিউর রহমান বিদ্যুতকে ১১ লাখ টাকা দিলেও ১১টি সংযােগের ব্যাবস্থা করে দেয় সে।ওই সময় বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলেন, শ্যামলা বেগমের সংযােগ বাতিল হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর তার নাম কােন বিদ্যুৎ বিলেও আসেনি। হঠাৎ করেই শ্যামলা বেগমের নাম বিল বকেয়া সংক্রান্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার সমন এসেছে।
এ প্রসঙ্গে মশিউর রহমান বিদ্যুত বলেন, খরচ বাবদ ১২ জনের কাছে থেকে টাকা নেওয়া হয় এবং ৯টি সেচ বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হয়। বাকি ৩টির বিষয় আমার জানা নেই। শুনছি এরমধ্যে দুইটি নিজ দায়িত্বে খুঁটি এবং তার কিনে সংযােগ নিয়েছে। শ্যামলা বেগমের লাইন না পাওয়ার বিষয়টি সখিপুর অফিসকে মৌখিকভাব অবহিত করা হয়েছিল।
মামলার বাদী টাঙ্গাইলর নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী’র সাথে মােবাইল বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মােবাইল কথা বলা যাব না, অফিস আসেন বলে তিনি ফােন কেটে দেন।’
টাঙ্গাইলর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ -১এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর কাছে মােবাইল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ফােনে কিছু বলবাে না।