বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ছয় মাস পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে দুই হাজার ২০২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যুবরণ করেছেন আরও ৩৭ জন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর ১০ দিনের মাথায় গত ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এ হিসাবে সংক্রমণের ১৮৪তম দিনে গতকাল মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৫১৬ জনে পৌঁছাল। এর বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ২৪ হাজার ৬৭৩ জন।
দীর্ঘ এই সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে। শীর্ষ সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম স্থানে উঠে এসেছে। মৃত্যুর দিক থেকে ২৯তম স্থানে রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, পেরু, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, স্পেন, আর্জেন্টিনা, চিলি, ইরান ও যুক্তরাজ্যের পরই এখন বাংলাদেশের অবস্থান।
পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সংক্রমণের ছয় মাসে একমাত্র যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের তুলনায় সংক্রমণ বেশি ছিল। তবে বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ বেশি মৃত্যুবরণ করেন। যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ লাখে ৬১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এই হার ২৭ জন। এ ছাড়া এই ১৪ দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই মৃত্যুর সংখ্যাও কম।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, দেশে করোনার সংক্রমণ কমে আসছে। গত কয়েক দিন সংক্রমণের হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এটি দুই সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল থাকলে মনে করতে হবে, সংক্রমণ কমে আসতে শুরু করেছে। এ জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। তবে জনস্বাস্থ্যবিদ, রোগতত্ত্ববিদসহ বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মত, সংক্রমণের হার কমছে, এটি এখনই বলা যাবে না। অন্তত দুই সপ্তাহ সংক্রমণ হার একই অবস্থানে থাকলে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলা যাবে।
প্রথম ৮৭ দিনে আক্রান্ত অর্ধলাখ, পরবর্তী ৯৭ দিনে পৌনে তিন লাখ :
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ৩২ দিনের মাথায় ৮ এপ্রিল আক্রান্ত ২১৮ জনে পৌঁছায়। একই সঙ্গে মৃত্যু হয় ২০ জনের। ৬২ দিনের মাথায় ৮ মে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৩৪ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ২০৬ জনে পৌঁছায়। অর্থাৎ দ্বিতীয় মাসে ১২ হাজার ৯১৬ জন আক্রান্ত হয়। মৃত্যুবরণ করেন ১৮৬ জন।
সংক্রমণের ৯৩ দিনের মাথায় ৮ জুন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৫০৪ এবং মৃতের সংখ্যা ৯৩০ জনে পৌঁছায়। অর্থাৎ সংক্রমণের তৃতীয় মাসে ৫৫ হাজার ৩৭০ জন আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন ৭২৪ জন। সংক্রমণের ১২৩ দিনের মাথায় ৮ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ১৯৭ জনে পৌঁছায়। অর্থাৎ সংক্রমণের চতুর্থ মাসে এক লাখ তিন হাজার ৬৩০ জন আক্রান্ত হয়। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন এক হাজার ২৬৭ জন। সংক্রমণের ১৫৪ দিনের মাথায় ৮ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৫৫ হাজার ১১৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছায়। অর্থাৎ সংক্রমণের পঞ্চম মাসে ৮২ হাজার ৯৭৯ জন আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করেন এক হাজার ১৬৮ জন। সংক্রমণের ১৮৪তম দিনের মাথায় গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৫১৬ জনে পৌঁছাল। সংক্রমণের ষষ্ঠ মাসে ৭২ হাজার ২৪৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেন এক হাজার ১৫১ জন। দেখা যাচ্ছে, চতুর্থ ও পঞ্চম মাসের তুলনায় ষষ্ঠ মাসে এসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমেছে।
সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সংক্রমণের ৮৭তম দিনে ২ জুন সংক্রমণ অর্ধলাখ ছাড়ায়। ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৭০৯ জনে পৌঁছায়। পরবর্তী ৯৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে তিন লাখ এবং মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়ায়। এ সময়ে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯১৪ জন আক্রান্ত এবং তিন হাজার ৮০৭ জন মৃত্যুবরণ করেন।
ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্যানুযায়ী, সংক্রমণে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৪ দিনের মাথায় ২৪ জুলাই ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪ জন আক্রান্ত হয় এবং এক লাখ ৪৯ হাজার ৬৮ জন মৃত্যুবরণ করেন।
সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে ১৮৪ দিনের মাথায় ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৮ লাখ চার হাজার ৭০২ জন আক্রান্ত এবং ৩৮ হাজার ১৬১ জন মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ১৮৪ দিনের মাথায় ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ লাখ ১২ হাজার ৬০৫ জন আক্রান্ত এবং এক লাখ ১৯ হাজার ৫৯৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।
চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়ায় ১৮৪ দিনের মাথায় ২ আগস্ট পর্যন্ত আট লাখ ৫০ হাজার ৮৭০ জন আক্রান্ত এবং ১৪ হাজার ১২৮ জন মৃত্যুবরণ করেন।
পঞ্চম স্থানে থাকা পেরুতে ১৮৪ দিনের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৭০২ জন আক্রান্ত এবং ২৯ হাজার ৬৮৭ জন মৃত্যুবরণ করেন।
ষষ্ঠ স্থানে থাকা কলম্বিয়ায় ১৮৪ দিনের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৬ জন আক্রান্ত এবং ২১ হাজার ১৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেন।
সপ্তম স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৮৪ দিনের মাথায় ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৭৮ জন আক্রান্ত এবং ১৪ হাজার ৬৭৮ জন মৃত্যুবরণ করেন।
অষ্টম স্থানে থাকা মেক্সিকোতে ১৮৪ দিনের মাথায় ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৭১২ জন আক্রান্ত এবং ৬৩ হাজার ৮১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন।
নবম স্থানে থাকা স্পেনে ১৮৪ দিনের মাথায় ৩ আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৪ জন আক্রান্ত এবং ২৮ হাজার ৪৭২ জন মৃত্যুবরণ করেন।
দশম স্থানে থাকা আর্জেন্টিনায় ১৮৪তম দিনের মাথায় ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার লাখ ৫১ হাজার ১৯১ জন আক্রান্ত এবং ৯ হাজার ৩৬১ জন মৃত্যুবরণ করেন।
১১তম স্থানে থাকা চিলিতে ১৮৪ দিনের মাথায় ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার লাখ ১৪ হাজার ৭৩৯ জন আক্রান্ত এবং ১১ হাজার ৩৪৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।
১২তম স্থানে থাকা ইরানে ১৮৪ দিনের মাথায় ২০ আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেন ২০ হাজার ২৬৪ জন।
১৩তম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে ১৮৪ দিনের মাথায় ৩ জুলাই পর্যন্ত দুই লাখ ৮৫ হাজার ১০৩ জন আক্রান্ত এবং ৪০ হাজার ৫৭৮ জন মৃত্যুবরণ করেন।
১৪তম স্থানে থাকা বাংলাদেশে ১৮৪তম দিনে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৫১৬ জনে পৌঁছাল।