বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রায় ছয় মাস পর স্টেশনের কাউন্টারে ফিরেছে ট্রেনের টিকিট। সব টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শনিবার সকাল ৮টা থেকে কাউন্টারে টিকিট দিচ্ছে রেলওয়ে। ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা যাত্রীরা আবার ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন।
প্রথম দিনে কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, কাউন্টারে টিকিটের জন্য যাত্রী কম। করোনার সংক্রমণ রোধে ট্রেনে অর্ধেক আসন খালি রাখায় টিকিটও কম। ট্রেনের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় রেলওয়ে তৎপর হলেও কাউন্টারে তা দেখা যায়নি।
করোনার বিস্তার রোধে গত ২৪ মার্চ ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়। সেদিন থেকে বন্ধ হয় কাউন্টারে টিকিট বিক্রিও। ৬৮ দিন পর ৩১ মে সীমিত পরিসরে ট্রেন চালু হলেও শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছিল রেলওয়ে। সংস্থাটির সিদ্ধান্ত ছিল, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট আর কখনোই কাউন্টারে দেওয়া হবে না। দেশের সাত কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নন; এমন বাস্তবতায় শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়ে।
আন্তঃনগরের টিকিট বিক্রিতে তাই আগের নিয়মে ফিরেছে রেলওয়ে। অর্ধেক টিকিট ওয়েব সাইট ও অ্যাপে দেওয়া হচ্ছে। বাকি অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে কাউন্টারে। তবে করোনার কারণে ট্রেনের অর্ধেক আসন খালি রাখায়, আদতে ইন্টারনেটে ২৫ ভাগ এবং বাকি ২৫ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে।
কাউন্টারে টিকিট ফেরায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। শনিবার বিকেলে কমলাপুরে প্রথম শ্রেণীর টিকিট বিক্রির কাউন্টারের কথা হয় নাজমুল হকের সঙ্গে। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট যাবেন। ‘উপবন এপপ্রেস’র টিকিটের জন্য এসেছেন। একই ট্রেনে ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। সিলেট যাওয়ার টিকিট পেলেও ফিরতি যাত্রার টিকিট পাননি।
নাজমুল হক জানালেন, তার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার নেই। অনলাইন থেকে টিকিট কাটার সুযোগ নেই। এ কারণে গত সাড়ে তিন মাস ট্রেনে টিকিট কাটতে পারেননি। এক সহকর্মীর মাধ্যমে জুলাইয়ে ঢাকা-সিলেটের টিকিট কেটেছিলেন। গত মাসে বাড়ি যান বাসে। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ায় এবার ট্রেনে ফিরবেন।
অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি হওয়ায় সবচেয়ে বঞ্চিত ছিলেন নিম্ন আয়ের প্রান্তিক মানুষ। আন্তঃনগর ট্রেনের দুয়ার তাদের জন্য একেবারেই বন্ধ হয়েছিল। কমলাপুর স্টেশনে শনিবার বিকেলে কথা হয় ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করা মো. রাসেলের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তার বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। অনলাইন থেকে টিকিট কাটার নিয়ম ও পদ্ধতি জানেন না তিনি। করোনার পর কাজ পেয়ে বাড়ি থেকে বাসে ফেরেন। গত ঈদে বাসে আসা যাওয়া করেন। এতে তার এক হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। অথচ ট্রেন ভাড়া ১৮৫ টাকা। কাউন্টারে টিকিট ফেরায় তার সুবিধা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বরের ‘যমুনা এক্সপ্রেস’র টিকিট নিয়েছেন তিনি।
তবে সুবিধার বাইরে বিপরীত মতও রয়েছে। কাউন্টার চালু হওয়ায় যাত্রীরা আগের মতো জটলা করছেন। এক সঙ্গে চার-পাঁচজন কাউন্টারের কাটের সামনে ট্রেনের তথ্য জানতে ভিড় করছেন, এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। রেল পুলিশ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে সামাজিক দূরত্ব মানতে কড়াকড়ি বহাল রাখলেও কাউন্টারে কোনো বাধা নিষেধ নেই।
প্রথম দিনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন না থাকলেও দিনে দিনে ভিড় বাড়বে বলে ধারণা করছেন রেল সংশ্নিষ্টরা। তখন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে- এ প্রশ্নে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেছেন, তারা শৃঙ্খলা ও যাত্রীদের সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন। কাউন্টারে অনেকগুলো বেসিন আছে হাত মুখ ধোয়ার জন্য। জীবাণুনাশকও রাখা হয়েছে। জটলা ঠেকাতে পুলিশও তৎপর থাকবে।